Bangladeshi Marine Cadets face an image problem

Comments Off on Bangladeshi Marine Cadets face an image problem

ইমেজ সংকটে বাংলাদেশী মেরিন ক্যাডেটরা

জসীম চৌধুরী সবুজ

বাংলাদেশী মেরিন ক্যাডেটদের চাকরির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এখন চলছে চরম মন্দা ভাব। ইমেজ সংকট ও ভিসা সমস্যার কারণে গত ৩ বছরে বিদেশী জাহাজে বাংলাদেশী কোনো মেরিন ক্যাডেটের চাকরি মেলেনি। এ অবস্থায় মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে বের হওয়া মেরিন ক্যাডেটদের সামনে ঘোর অন্ধকার দেখা দিয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রায় ৫শ ক্যাডেট গত তিন বছরে কোনো জাহাজের মুখ দেখেননি। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাডেটশিপ লাভের পর গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট পেতে হলে জাহাজে এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। যাকে সি টাইম বলা হয়। কিন্তু গত ৩ বছরে কোনো ক্যাডেট জাহাজে সুযোগ না পাওয়ায় আটকে গেছে তাদের গ্র্যাজুয়েশনও। এ অবস্থায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি প্রতারক চক্রের কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী মেরিনারদের মারাত্মক ইমেজ সংকট তৈরি হয়। এ চক্র জাল সনদ, সিডিসি দিয়ে অদক্ষ লোকদের বিদেশী জাহাজে তুলে দেয়। পরে তারা বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে নেমে পালিয়ে যায়। এ ধরনের একটি সাম্প্রতিক ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে জাপান সাগরে ডুবে যায় এমভি মিং ইয়াং নামে কম্বোডিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। জাহাজটির ক্যাপ্টেন মোস্তফা কামাল এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার মুনিরুজ্জামান দুজনই ছিলেন বাংলাদেশী। পরে তদন্তে বের হয়ে আসে তাদের যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। জাল সনদ দিয়েই বিদেশী জাহাজে চাকরি নিয়েছিল। আগে তারা মংলা বন্দরে বিভিন্ন জাহাজে শ্রমিকের কাজ করত। বিষয়টি আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশী মেরিনারদের চাকরির বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২৯ ডিসেম্বর ইরানের শিপিং অধিদফতরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এখানে ডিজি শিপিং অফিসে মত বিনিময়কালে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সময়ে তারা জাল সনদধারী যেসব মেরিনারকে শনাক্ত করেন তার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই থাকে বাংলাদেশে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয়ায় বিদেশী জাহাজ মালিকরা জটিলতা এড়াতে ভারত, ফিলিপাইন বা অন্য দেশের মেরিনারদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। মেরিনারদের আগে সর্বত্র অন অ্যারাইভেল ভিসা দেয়া হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশী মেরিনারদের ক্ষেত্রে সে নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না। তাদের ভিসা সংগ্রহ করেই যেতে হয়। এছাড়াও চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ক্যাডেট প্রতিবছর পাস করে বের হওয়ায় সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতেই বহির্বিশ্বে শিপিং ব্যবসায় মন্দা ও পরিবহন ভাড়া কমে যাওয়ায় বহু জাহাজ মালিক তাদের জাহাজকে স্ক্যাপ মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে সমুদ্রগামী জাহাজ মালিকদের ওপর। দেশে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ২০০৯ সালে যা ছিল ২৪টি, ২০১২ সাল পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭০-এ। কিন্তু এরপর বিশ্ব নৌবাণিজ্যে মন্দার ফলে জাহাজ ব্যবসায় ধস নামলে বর্তমানে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৮টিতে। এ অবস্থায় কোনো রকম সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই বেসরকারি খাতে আরও ১২টি মেরিন ইন্সটিটিউটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর যেসব ক্যাডেট বের হচ্ছে তাদের সিংহভাগই কোনো জাহাজে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম জার্নালের উদ্বৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১১-১২ সালে বিদেশী জাহাজে বাংলাদেশী মেরিনারের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪শ। তারা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স দেশে পাঠাত। বর্তমানে বিদেশী জাহাজে নতুন করে কোনো মেরিনারের চাকরি তো হচ্ছেই না বরং আগের সংখ্যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২শ জনে। একইভাবে রেমিটেন্স প্রেরণের হারও অর্ধেক কমে ৫শ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে।

উল্লেখ্য, মেরিন একাডেমি থেকে পাস করা ক্যাডেটদের চাকরির জন্য মূলত নির্ভর করতে হয় দেশীয় জাহাজের ওপর। অন্যান্য প্রাইভেট মেরিটাইম ইন্সটিটিউটের ক্যাডেটদের চাকরির বাজার সন্ধান করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মেরিন একাডেমি থেকে বের হওয়া ক্যাডেটদের কর্মসংস্থানে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে বেকার ক্যাডেটের সংখ্যা। গত তিন বছরে পাস করে বের হওয়া ৫ শতাধিক মেরিন ক্যাডেট তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত।

শিপিং সেক্টরে প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, গ্লোবাল চেঞ্জের দিকে কোনো খেয়াল না রেখে পঙ্গপালের মতো মেরিন ক্যাডেট ভর্তি করা হচ্ছে। কোনো রকম সম্ভাব্যতা যাচাই না করে দুর্নীতির মাধ্যমে ১২টি প্রাইভেট মেরিন ইন্সটিটিউটকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি একটি বিশেষায়িত সেক্টর। এখানে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তারা পরে আর অন্য কোনো লাইনে গিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুরুতে মেরিন একাডেমিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১২ সালে সিদ্ধান্ত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে, মেরিন একাডেমি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবেই থাকবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় পাস করে বের হওয়া ক্যাডেটদের বেকার থাকাসহ অন্যান্য দাবি নিয়ে ক্যাডেটদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব নৌমন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারাই ভালো বলতে পারবেন।

Source: Jugantor

Comments are closed.