search the site
অনবোর্ড চার্জ নিয়ে ব্যর্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে জটিলতা

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অনবোর্ড চার্জ নিয়ে বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে আবারও জটিলতা দেখা দিয়েছে। দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হচ্ছে চিঠি, যুক্তি ও পালটা যুক্তি। এই অবস্থায় জাহাজের অনবোর্ড সার্ভিসে বার্থ অপারেটররা ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিপিং এজেন্টরা। তবে অভিযোগকে মিথ্যা বলে জানিয়েছেন বার্থ অপারেটররা।
চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুয়াশা ও প্রাকৃতিক কারণে বন্দরের একটি-দুইটি জাহাজের অনবোর্ড কাজে বিঘ্ন ঘটে। এটাকেই ধীরে চলো বলা হচ্ছে। বার্থ অপারেটিংয়ে অনবোর্ড কাজে ধীরে চলার কোনো নজির নেই।
এদিকে বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন এক চিঠিতে অভিযোগ করে, গত ২১ জানুয়ারি রাতে কয়েকটি আমদানি-রপ্তানি ইয়ার্ডে বিভিন্ন অজুহাতে ইকুইপমেন্ট অপারেটররা আমদানি পণ্য নামানো ও রপ্তানি পণ্য ওঠানোতে গড়িমসি করে। ফলে বার্থ অপারেটরদের কনটেইনার বহনকারী ট্রেইলারগুলো বিস্তর সময় অপেক্ষমাণ থেকে সময় ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ও সংগঠনের পরিচালকবৃন্দ গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে নবনিযুক্ত সদস্য (মেরিন অ্যান্ড হারবার) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের বিভিন্ন বিষয় দেখভালের দায়িত্ব সাধারণত সদস্য মেরিন হারবারকেই দেওয়া হয়। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্র জানায়, অনবোর্ড অপারেশন নিয়ে নতুন নছরের ২২ জানুয়ারি নাগাদ কোনো বৈঠক কারো সঙ্গেই কারো হয়নি।
গত ১৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে বন্দর ভবনে। সেই বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কনটেইনার এজেন্টস অ্যসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। বার্থ অপারেটরদের অভিযোগ বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কেউ আসেননি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা গেলে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই বৈঠকটিতে শিপিং এজেন্টদের যোগ দেওয়ার কথা ছিল না। কারণ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অনবোর্ড অপারেশন চার্জ নিয়ে আলোচনার কথা লেখা ছিল না।
ঐ বৈঠক সম্পর্কে এক জন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, বৈঠকে বার্থ অপারেটরদেরকে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে অনবোর্ড অপারেশন চার্জ নিয়ে বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা নিজেরা যেন বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করে, তা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়।
চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিপিং এজেন্টরা জাহাজের অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জের ওপর ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ বাড়ায়নি, যেখানে তারা ঐ অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছরান্তে ১০ শতাংশ বাড়ায়। সময় হিসাবে অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। তাই গত ২০০৭ সাল থেকে ২০২৫ সালের দীর্ঘ সময়ের বিবেচনায় আমরা কনটেইনার প্রতি ৫ ডলার করে বাড়িয়ে দিতে বলেছি।’
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ইত্তেফাককে বলেন, ‘বার্থ অপারেটররা এখানে এককভাবে চার্জ বাড়াতে বলেছে, আমরা বলেছি না-বাড়াতে। প্রতি বছর তারা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে একটি চার্জ নিচ্ছে। আমরা আগে ইচ্ছেমতো বার্থ অপারেটর নিয়োগ করতে পারতাম, এখন পারছি না। তারা নিজেদের মতো কাজ করে, ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কোনো দায় নেয় না। আমাদের কী কী ক্ষতি হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলেছি, এ বিষয়ে আমরা চিঠি রেডি করছি।’ তিনি বলেন, এ মুহূর্তে রেট বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। গত ১৫ বছর ধরে তারা যে মনোপলি চালিয়েছে, বর্তমানে ওপেন টেন্ডারের কথা বলা হচ্ছে, তাহলে চার্জের রেট অনেক কমে আসবে।
বার্থ অপারেটরদের পক্ষ থেকে বন্দরকে দেওয়া চিঠিতে খরচের যে বিবরণী দেখা যায়, তাতে প্রতি কনটেইনারে বার্থ অপারেটরদের ৩৫৩ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে শিপিং এজেন্টদের পক্ষে বলা হচ্ছে, প্রতি কনটেইনারে বার্থ অপারেটররা ৬৬২ টাকা লাভ করছে।
source : ittefaq