search the site
বন্ধ হচ্ছে সরাসরি জাহাজ চলাচল
চট্টগ্রাম ও বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরের মধ্যে চালু হওয়া সরাসরি রুটগুলো অনেক আশা জাগিয়েও টিকতে পারছে না। এসব রুটে একে একে বন্ধ হচ্ছে জাহাজ চলাচল। বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সরাসরি রুটে (সমুদ্রপথ) আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশি-বিদেশি শিপিং এজেন্টরা।
বেশ ঘটা করেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম ও ইতালির রেভেনা বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল। এটিই ছিল প্রথমবারের মতো ইউরোপের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজযোগে পণ্য পরিবহন। এই উদ্যোগে আমদানি-রপ্তানিতে সময় কমে এসেছিল প্রায় ১৫ দিন। একই সঙ্গে সাশ্রয় হয়েছিল অর্থেরও। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ইউরোপের সঙ্গে নতুন দুয়ার উন্মোচন করা সমুদ্রপথটিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশানুরূপ পণ্য না পাওয়া এবং ফ্রেইট কমে যাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল সচল রাখা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটের প্রাথমিক সাফল্য দেখে পরে চট্টগ্রাম ও বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরের মধ্যে সরাসরি আরও পাঁচটি রুট চালু হয়। এর মধ্যে এখন শুধু চীনের সঙ্গে নিয়মিত জাহাজ চলাচল রয়েছে। চট্টগ্রাম-চীন সরাসরি রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। ইতালি ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডস রুটে এখন আর নিয়মিত জাহাজ চলছে না। ফলে অনেকটা আগের মতোই ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন রুটের মধ্যে চীন ছাড়া অন্যগুলোতে জাহাজ তেমন চলছে না। পর্যাপ্ত পণ্য না পাওয়ার কারণে এ অবস্থা। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার জাহাজ সরাসরি ইউরোপ বা আমেরিকার বন্দরে যায় না। জাহাজ প্রথমে শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে পৌঁছে সেখানে কনটেইনার নামিয়ে দেয়। এর পর ইউরোপ-আমেরিকাগামী মাদার ভেসেলে তুলে দেওয়া হয়। এতে প্রায় এক সপ্তাহ বাড়তি সময় লাগে। এ ছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট থাকলে ব্যয় হয় আরও বেশি সময়। কখনো কখনো ১০-১৫ দিন বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। সরাসরি রুটে জাহাজ পাঠাতে পারলে এই সময় বেঁচে যায়। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস নামক একটি দেশি শিপিং এজেন্ট প্রথম ইতালির রেভেনা ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সোঙ্গা চিতা ও কেপ ফ্লোরেন্স নামের দুটি জাহাজ দিয়ে সার্ভিস চালু করে। পরে বহরে আরও দুটি জাহাজ যোগ হয়। এ ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে স্পেনের বার্সেলোনা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই রুটেও জাহাজ চালু হয়েছিল। তিনটি রুটেই জাহাজ চলাচল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানান রিলায়েন্স শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ। তিনি বলেন, রুটগুলো যখন চালু হয়েছিল, তখন জাহাজ ভাড়া বেশি ছিল। বর্তমানে সেই ভাড়া (ফ্রেইট) প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। তাই রুটগুলো আর ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হচ্ছে না। চট্টগ্রাম শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সরাসরি রুটগুলো চালু হয়েছিল। তখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরসহ ইউরোপ আমেরিকার বন্দরগুলোয় কনটেইনার জট ছিল ভয়াবহ। তাছাড়া কনটেইনার ও জাহাজের সংকটও ছিল। ৩ থেকে ৪ হাজার ডলারের ভাড়া বেড়ে ১৬ থেকে ২০ হাজার ডলারে উঠেছিল। ওই অবস্থায় কম খরচে সময়মতো ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাতে সরাসরি রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে। এখন ভাড়া অনেক কমে গেছে। তাই কেউ এসব রুটে জাহাজ চালাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তিনি জানান, কিছু রুট বন্ধ হলেও চীনের সঙ্গে সরাসরি রুটটি বেশ আশাব্যাঞ্জক। এ রুটে বর্তমানে যে পরিমাণ জাহাজ চলছে তার চেয়ে দ্বিগুণ জাহাজ চালানোর মতো আমদানি পণ্য রয়েছে। এদিকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলো বন্ধ হতে থাকলেও চলতি বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানের করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এই রুটটি দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম-ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতের মুন্দ্রা হয়ে ফের দুবাই পর্যন্ত বিস্তৃত। এ ছাড়া মালদ্বীপ এবং থাইল্যান্ডের রেনং বন্দরের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এই তিনটি রুট লাভজনক হতে পারে বলে আশাবাদী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা।
source : bd-pratidin