search the site
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন গেল খাদ্যপণ্যের ৭ ট্রলার

মিয়ানমারে সংঘাতের জের ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে নাফ নদীতে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ পরিস্থিতিতে টেকনাফ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পৌঁছাতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিন গেল খাদ্যপণ্যবাহী সাতটি ট্রলার।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার নৌপথে চলাচল করা পাঁচটি পর্যটকবাহী জাহাজে করে দুই হাজারের কাছাকাছি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে আসছেন। পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে খাদ্যপণ্য পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খাদ্যপণ্যবাহী এসব ট্রলারের সঙ্গে টেকনাফে থাকা অন্তত ৫০ জন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা দ্বীপে গেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে ট্রলার মালিক ও চালকদের নাফ নদীতে সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন নৌযান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার নাফ নদীর সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টির ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। তবে বঙ্গোপসাগর হয়ে শাহপরীর দ্বীপ বদর মোকাম এলাকায় বিকল্প ‘গোলাগরা’ ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথ পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
সেন্ট মার্টিনের পথে খাদ্যপণ্যবাহী একটি ট্রলারছবি: প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সাড়ে ১০ হাজার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যগুলো একমাত্র টেকনাফ থেকে সরবরাহ হয়ে আসছে। কোনো কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকলে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলতি মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার নৌপথে পাঁচটি জাহাজে করে দৈনিক দুই হাজারের মতো পর্যটক দ্বীপে বেড়াতে আসছেন। খাদ্যসংকটের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী টেকনাফসহ বাংলাদেশ লাগোয়া পুরো সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রচারিত বিবৃতিতে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশ দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারসহ যেকোনো ধরনের নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এতে নাফ নদীর জলসীমার শূন্যরেখার কাছাকাছি নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, জোয়ারের সময় ছোট ও মাঝারি আকারের ট্রলারগুলোকে নাফ নদী দিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বাংলাদেশের জলসীমার অভ্যন্তরে অনুমতি নিয়ে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব ট্রলার কোনো অবস্থাতেই শূন্যরেখার কাছাকাছি অথবা মিয়ানমার জলসীমায় প্রবেশ করতে পারবে না। এ ছাড়া জোয়ারের সময় যাত্রীবাহী স্পিডবোটগুলো শাহপরীর দ্বীপের বদর মোকামের গোলারচর পয়েন্ট দিয়ে ‘গোলাগরা’ বিকল্প নৌপথে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াত করতে পারবে।
সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌপথের চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ২৭টি সার্ভিস ট্রলার ও ৪৭টি স্পিডবোটের চলাচল করে আসছিল। গত বুধবার সকালে উপজেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে কোন ধরনের নৌযান চলাচল করেনি।
এ ব্যাপারে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উপ-অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেকনাফ সীমান্তে নিরাপত্তাসহ নাফ নদীতে টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
source : prothomalo