search the site
চট্টগ্রাম বন্দরকে পাঁচটি লোকের হাতে জিম্মি রাখতে চাচ্ছি না
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আমি আপনাদের (বিএসসির শেয়ারহোল্ডার) আশ্বস্ত করছি, এই মন্ত্রণালয়ে আমি যতদিন আছি, ইনশাল্লাহ আপনারা বিশ্বাস রাখতে পারেন, এখানে আগের মতো চুরি চামারি আর হবে না। ১০০ টাকাও যদি কেউ ঘুষ নেয়, আমার হাতে যদি কেউ ধরা পড়ে, আমি তার শাস্তি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।
গতকাল রোববার বিকালে নগরীর বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত বিএসসির ৪৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি–দুটি কিংবা চারটি–পাঁচটি লোকের হাতে জিম্মি করে রাখতে সরকার চায় না। এছাড়া বাংলাদেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রি যেন আরো উন্নত হয় সেই চেষ্টা আমরা করছি। প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে বলেছি, আপনারা যদি শিপিং লাইনে আসতে চান তাহলে আমাদের সহযোগিতা পাবেন। শুধু তাই নয়, আমরা চেষ্টা করছি সরকারের অনুমতিক্রমে ইনল্যান্ড পোর্ট কয়েকটি পাবলিকের কাছে দেওয়ার জন্য। এ ধরনের ব্যবসা আর সরকার করতে পারে না। আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম পোর্ট অত্যন্ত মুনাফার একটা জায়গা। চট্টগ্রাম পোর্টের যে উন্নতি হয়েছে, এটা পোর্ট অথরিটি, মন্ত্রণালয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে হয়েছে। আমি এ নিয়ে চট্টগ্রাম পোর্টে তিনবার গিয়েছি, এবারও যাব। চট্টগ্রাম পোর্টের যে সমস্যা, সেগুলো আমরা দূর করার চেষ্টা করছি।
নৌ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চট্টগ্রাম বন্দরে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থা করছি। কয়েকটা কান্ট্রি চট্টগ্রাম বন্দর, বে টার্মিনালসহ অন্যান্য বন্দরে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ৬০০ মিলিয়ন ডলার বে টার্মিনালে বিনিয়োগ করার জন্য বসে আছে। দ্রুত আমরা এটা সাইন করব। এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রমিকরা অধিকতর চাকরির সুযোগ পাবেন। বেতন হবে বর্তমান পে স্কেলের চাইতে বেশি। এই যে চট্টগ্রাম বন্দরকে নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর আশা–প্রত্যাশা, আমরা এটাকে একটি, দুটি কিংবা পাঁচটি লোকের হাতে শুধু জিম্মি করে রাখতে চাচ্ছি না। এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এটা চট্টগ্রাবাসীর জন্য গর্বের বিষয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দর যেন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়।
তিনি বলে, বিএসসির জাহাজের বহর আরো বড় করার চেষ্টা করছি। বিএসসির নিজস্ব টাকায় অন দ্যা স্পট দুটি জাহাজ কিনতে যাচ্ছি, যেগুলো হবে বাল্ক ক্যারিয়ার। বিএসসির এমডি প্রতিদিন খবর দিচ্ছেন কোথায় কোথায় জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা পাঁচ বছরের নিচে কোনো জাহাজ কিনব না। ইতিমধ্যে দুটি জাপানি জাহাজের খবর পাওয়া গেছে, নিশ্চয় ভালো হবে। জাহাজ দেখে সিদ্ধান্ত নেব হবে কি হবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো জাহাজ কিনব।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান পৌনে ৫শ কোটি টাকা ঋণ ফেরত দিয়েছে, এটি বড় কথা। এটা সম্ভব হয়েছে আপনাদের (শেয়ারহোল্ডার) জন্য। বিএসসি শেয়ারবাজারের দুর্দিনে ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। বাজার থেকে চুরি চামারি হয়েছে। কোনো কোম্পানি এত লভ্যাংশ দিতে পারছে না। পাঁচটি জাহাজ বিএসসির বহরে বর্তমানে আছে। আশা করি, আগামী বছর আপনাদের লভ্যাংশ আরো বাড়বে। আমি আশা করি আগামী এজিএমে সুখবর পাবেন। একজন শেয়ারহোল্ডার তো এখানে বলেছেন, অনেকে রাতে এজিএম করে, শেয়ার হোল্ডাররা জানে না। কিন্তু আমরা দিনের বেলায় আপনাদের ডেকে এজিএম করছি। তাও একটি সরকারি সংস্থার এজিএম।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আমরা মনে করি বিএসসি উদাহরণ সৃষ্টিকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান। আগামী এক বছরের মধ্যে বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চীনের সঙ্গে চারটি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি জানুয়ারিতে হবে। তিন বছরের মধ্যে এ চারটি জাহাজ বহরে যুক্ত হবে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বিএসসি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। এ সংস্থাকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই আমরা। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বিএসসি ৫৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা আয় করেছে। ৩১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিট মুনাফা হয়েছে ২৪৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা; যা গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আগের বছরের মতো ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগিরই ১২টি নতুন কন্টেনার জাহাজ সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
SOURCE : dainikazadi