কর্ণফুলী দখল করে জেটি নির্মাণ

Comments Off on কর্ণফুলী দখল করে জেটি নির্মাণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে শাহ আমানত সেতুর কাছে নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ জেটি। এতে নদী সংকুচিত হচ্ছে। মেসার্স নাহার ট্রেডিং নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জেটিটি নির্মাণ করেছে।

সম্প্রতি নদীর তীরের ১৫০ ফুট এলাকাকে নদীর সীমানা ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তা অমান্য করে রাতারাতি নদীর তীর দখলে নিয়ে ভরাটে মেতেছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে তাদের এই জেটি।

সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর বামতীরে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকায় অবৈধভাবে জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইট-সুড়কি ফেলে নদীর তীর ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে মালপত্র লোড-আনলোড করা হচ্ছে। তবে জেটিটির অপসারণ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি।

কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন বলছে, বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের অধিক্ষেত্র। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।

এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জেটিটি পরিদর্শন করেছেন। তারপরও ওই প্রতিষ্ঠান তীর থেকে নদীর ভেতরে ৪০-৫০ ফুট ভরাট করে দখলে নিয়েছে। এতে নদীর গতিপথ ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কর্ণফুলী নদীর গবেষক এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদী ও খাল রক্ষা কমিটির সদস্য ড. ইদ্রিস আলী বলেন, কর্ণফুলী নদীর নাব্য কমে এসেছে সবাই জানে। ওই প্রতিষ্ঠানটি যা করেছে, তার সঙ্গে রাষ্ট্র ও সাধারণ মানুষের কোনো স্বার্থ নেই। আছে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ। এই জেটি ছোট একটি বন্দর, তা বন্ধ করতে হবে।

গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এস্টেট শাখা চিঠি দিয়ে কর্ণফুলী নদীর বামতীরে শাহ আমানত সেতুর পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট ভরাট করা জায়গা তিন দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনুমোদনহীন বার্জ সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ওই প্রতিষ্ঠান।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মেসার্স নাহার ট্রেডিং কর্তৃক শিকলবাহা মৌজায় কর্ণফুলী নদীর বামতীরে শাহ আমানত সেতুর পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে নদী তীরবর্তী ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গা ভরাটসহ চট্টগ্রাম বন্দরের অনুমতি ব্যতীত একটি বার্জ স্থাপন করা হয়েছে, যা প্রচলিত আইনে দ-নীয় অপরাধ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন ২০২২-এর তৃতীয় অধ্যায়ের (১৯)-এ বন্দর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ও দায়িত্বে বলা আছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বন্দর সীমানার সর্বোচ্চ জোয়ার রেখা থেকে ৫০ গজের মধ্যে কোনোরূপ স্থাপনা নির্মাণ, অপসারণ, মাটি খনন বা ভরাট করতে পারবে না।

জানতে চাইলে মেসার্স নাহার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারীমোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘আমরা এখনো বন্দরের অনুমতি পাইনি। তবে বন্দরের অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। কিছু কাগজপত্র অসম্পূর্ণ ছিল, তা চেয়েছে। এসব কাগজপত্র ব্যবস্থা করে জমা দিচ্ছি।’

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। আর জেটিটি পরিদর্শন করে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানকে জেটির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। তারা অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট ও লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। এ ছাড়া এটি বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকা।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বামতীরে অবৈধভাবে ১ হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গা ভরাট করা হয়েছে। আমরা তিন দিনের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা শিগগিরই বন্দরের সার্ভেয়ার পাঠিয়ে পরিমাপ করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

source : deshrupantor

Comments are closed.