দুধের স্বাদ যখন ঘোল দিয়েই মেটাতে হয়

Comments Off on দুধের স্বাদ যখন ঘোল দিয়েই মেটাতে হয়

গোলাম এম সোহরাওয়ার্দী ( বামে ) সাইফুর রহমান ( ডানে )

মিনার রশীদ

এই দুঃসময়েও  ছোট্ট একটি ঘটনা এক পলক শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছে। তাই এখানে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না।   ঘটনাটি আমাদের মেরিন একাডেমির এলামনাই এসোসিয়েশনের নির্বাচন নিয়ে ! 

প্যানেলের অন্যান্য পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে নাই।  কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে দুজন প্রার্থী থাকায় সেটার প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং যথারীতি  একটা নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়। 

প্রেসিডেন্ট পদের দুজন প্রার্থীর একজন আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী   এবং অন্যজন  বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী  ।

নির্বাচনের আগে কেউ কাউকে ছাড়বেন না এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল! কাঁদা ছোড়াছুড়ি না হলেও  ইন্টারনেটে মন্তব্য ছোড়াছুঁড়িতে আমাদের নোনা জলের মেরিনার্স ফোরামটি বেশ তপ্ত হয়ে পড়েছিল ।

প্রার্থীর দুজনেই অত্যন্ত গ্ল্যামারাস  মেরিনার – জল থেকে যারা স্থলে এসে আরও হেভিওয়েট হয়েছেন ! একজন অত্যন্ত সিনিয়র যাকে আমরা বলি  গ্র্যান্ড গ্র্যান্ড সিনিয়র, কমিউনিটির জন্যেও তাঁর  প্রচুর অবদান রয়েছে। মেরিনারদের মধ্যে এলামনাই ধারণা বা স্পিরিটটি বলতে গেলে তিনিই শুরু করেছেন।  অন্যজন তুলনামূলক ইয়ং, ব্যবসায়িক,সামাজিক ও প্রশাসনিক স্তরে বেশ পরিচিতমুখ ও প্রভাবশালী। এমন দুজন শক্তিশালী প্রার্থীর মধ্যে কাকে ভোট দেয়া যায় – ভোটারদের অনেকের জন্যেই বিষয়টি বেকায়দা অবস্থার সৃষ্টি করেছিল! হাড্ডা হাড্ডি লড়াই শেষে মাত্র কয়েক ভোটে  জনাব সোহরাওয়ার্দী (ষষ্ঠ ব্যাচ)  বিজয়ী হন ( প্রাপ্ত ভোট  ৫১% এবং ৪৯%) ।

সবচেয়ে ভালো  লেগেছে, পরাজিত  প্রার্থী ক্যাপ্টেন   সাইফুর রহমান(১৫তম ব্যাচ)  বিজয়ী প্রার্থী এবং চীফ ইলেকশন কমিশনার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন কাদরীকে(১৬) অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে একটি মেইল পাঠিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীর  সেই মেইলটি পড়ে যারপরনাই শান্তি ও তৃপ্তি পেয়েছি। যারা প্রকৃত বীর তারা শুধু জয়ের মাধ্যমেই নিজেদের বীরত্ব দেখান না।  পরাজয়ের মাধ্যমেও নিজের মাহাত্ম্য দেখাতে পারেন।  পরাজয়কেও এঁরা শেষমেশ জয় করে ফেলেন!

গনতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো সংখ্যাগরিষ্টের মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো । এ জন্য আয়োজন করা হয় ভোটের। যিনি বেশি ভোট পান তিনি নির্বাচিত হোন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের সমাজে সংখ্যাগরিষ্টের মতের প্রতি শ্রদ্ধা তো দূরে থাক ভিন্নমত মেনে নেয়ার মতো গনতান্ত্রিক চেতনা যেনো লোপ পেতে বসেছে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্টান গুলো ধ্বংসের উপক্রম হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেরিন একাডেমির এলামনাই এসোসিয়েশনের নির্বাচন আমাদের কিছুটা হলেও আশাবাদি করে তুলেছে।

 যে বিষয়টি জাতীয় লেবেলে দেখতে চেয়েছিলাম( এই জীবনে মনে হয় না সেই আশা  আর পূরণ হবে)   তা ছোট্ট পরিসরে দেখেও কেমন যেন তৃপ্তি পাচ্ছি । লেখালেখির উদ্দেশ্য ছিল, এই ধরনের বিবেকবান ও পরিশীলিত কিছু মানুষকে দেশ ও সমাজের কাজে টেনে আনা এবং যারা এই কাজে ইতোমধ্যে সংযুক্ত হয়েছেন  তাদের ভেতর সততা,মানবিকতাবোধ, দায়িত্ববোধ এবং প্রয়োজনীয় লজ্জা শরম যোগ করা। কিন্তু চার পাশের বাস্তবতা দেখে খুব একটা আশান্বিত হওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায়  আমাদের ছোট্ট পরিসরে আশার একটি ঝিলিক যেন স্পষ্ট হয়েছে।

বলা যায়, দুধের স্বাদ ঘোলে হলেও কিছুটা মিলেছে।

মিনার রশীদ :  (২১ ই)


Comments are closed.