গভীর সমুদ্রে জাহাজ কীভাবে জলদস্যুর কবলে পড়ে

Comments Off on গভীর সমুদ্রে জাহাজ কীভাবে জলদস্যুর কবলে পড়ে

ভারত মহাসাগরে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করে ফেলেছে দস্যুরা। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছিল। 

গভীর সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজগুলো কীভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়ে তা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছে জাহাজের সাবেক ২ ক্যাপ্টেন। খবর বিবিসি বাংলার।

তারা জানান, পণ্যবোঝাই থাকায় জাহাজগুলো সাধারণত আর্ন্তজাতিক নৌরুটে ধীরে চলে। এমভি আবদুল্লাহর মতো আকারের (১৯০ মিটার) জাহাজগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ টন পণ্য বোঝাই থাকে। বেশি পণ্য বোঝাই থাকায় বেশির ভাগ জাহাজের গতি থাকে ১৮ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল। আর জলদস্যুরা যখন কোনো জাহাজকে টার্গেট করে তখন তারা ছোট ছোট বোট অস্ত্র নিয়ে তিন-চারদিক থেকে আক্রমণ করে। গতি কম থাকায় জলদস্যুদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।

সোমালিয়ান জলদস্যুর হাতে মঙ্গলবার জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটির বেলায়ও একই চিত্র দেখা গেছে।

জাহাজের সাবেক ক্যাপ্টেন ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জলদস্যুরা যখন জাহাজ দখলে নিতে আসে তখন তাদের কাছে হুক থাকে, অস্ত্র থাকে, টেলিস্কোপ ও ল্যাডার থাকে। তিন চারদিক থেকে ত্রিশ চল্লিশজন অস্ত্রসহ এসে জাহাজে উঠে পড়ে।

তিনি বলেন, ওঠার পরই তাদের কেউ জাহাজের ইঞ্জিন রুমে, কেউ লোকদের জিম্মি করে। কেউ জাহাজ স্লো ডাউন করে। কখনও জাহাজের ইঞ্জিনও বন্ধ করে দেয়।

সাবেক এই ক্যাপ্টেন জানান, জলদস্যুরা সাধারণত জাহাজে ওঠার পরই যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা ডাকাতি শুরু করে। যাদের কাছে টাকাপয়সা কিংবা অন্য দামী জিনিসপত্র থাকে সেগুলো নিয়ে নেয়। মোবাইল নিয়ে নেয়। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ।

তিনি আরও জানান, এরপর জাহাজে থাকা ক্রুদের সাহায্যে জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এরিয়ার কাছাকাছি যে কোনো একটি পোর্টে নিয়ে যায়। সেখানে নোঙ্গর করে দুয়েকদিন পর গিয়ে তারা মুক্তিপণ দাবি করে। এই মুক্তিপণ দাবি করা হয় মালিক কোম্পানির কাছে।

মালিকানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দস্যুরা কীভাবে যোগাযোগ করে

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, প্রত্যেকটা জাহাজেই মালিকানা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য থাকে। কার সাথে যোগাযোগ করবে, তার নাম নম্বর, সিকিউরিটি অফিসার যে থাকে তার নাম ও নম্বর লেখা থাকে জাহাজে। প্রত্যেকটি জাহাজে স্যাটেলাইট ফোন আছে। সেটা দিয়ে তারা মালিককে ফোন দেয়।

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া জাহাজটির মালিক বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপ। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান।

কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেটা হয়, জলদস্যুরা জাহাজের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তাদের সুবিধামতো সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করবে। এরপর আমরা জানতে পারবো আসলে তাদের চাহিদা কী! সেটা হতে এখনও দেড় থেকে দুইদিন সময় লাগতে পারে।

তিনি বলেন, জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন। ঘটনার পর তারা আমাদের মেসেজ দিয়েছে। তারা জিম্মি থাকলেও নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। পথে ভারত মহাসাগরে এটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

সূত্র : সমকাল

Comments are closed.