search the site
আড়াই বছরে সবচেয়ে কম জাহাজ এসেছে ফেব্রুয়ারিতে
গত ফেব্রুয়ারিতে ২৯৬টি জাহাজে পণ্য আনা-নেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর আগে গত জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৩১৮। বন্দরটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত প্রায় আড়াই বছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং কখনো ৩০০-এর নিচে নামেনি। এর আগে এর চেয়ে কম জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে, ২৯১টি।
আন্তর্জাতিক জাহাজের স্থানীয় প্রতিনিধি কসকোল শিপিং লাইনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমদানির গতি স্বাভাবিক নেই। যেটা বুঝেছি, ডলার সংকটে এলসি নিয়ে এখনো কড়াকড়ির কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতি এখন এমন যে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য জেটি বরাদ্দ পেতে শিপিং ব্যবসায়ীদের ছুটতে হচ্ছে না। জেটি খালি পাওয়ায় জাহাজ এসে ভিড়ে গেছে। গত মাসে একসঙ্গে একাধিক জেটি খালি থাকার মতো ঘটনা ঘটেছে। আশা করছি, দ্রুতই ব্যবসা ইতিবাচক হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরের পরিবহন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কনটেইনারজাত পণ্য পরিবহন। ফেব্রুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে) কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।
বন্দর দিয়ে গত মাসে কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩২টি। আগে জানুয়ারিতে ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬২টি। বন্দরের মূল জেটি, ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা যোগ করে এ হিসাব দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ তালিকায় আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার হিসাব করা হয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট কনটেইনারের ৯৮ শতাংশ পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ফলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভার অনেকটা এককভাবে বহন করে চলেছে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর। কনটেইনারবাহী জাহাজ ও খোলা পণ্যবাহী বাল্ক কার্গো দুই ধরনের জাহাজে আসা পণ্য ওঠানামার ভিত্তিতে বন্দরের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক পণ্যসহ প্রায় সবই আনা হয় কনটেইনারে। সমুদ্রপথে রফতানি পণ্যেরও পুরোটা বিদেশে যায় কনটেইনারে।
কনটেইনার পরিবহনের পাশাপাশি একইভাবে কমেছে কার্গো হ্যান্ডলিংও। ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে মোট ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার টন। জানুয়ারিতে ১ কোটি ১ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তত ২ শতাংশ কমেছে প্রবৃদ্ধি। বাল্ক কার্গোর এ হিসাবে কনটেইনার কার্গোও যুক্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাল্ক বা হ্যাজযুক্ত জাহাজে চিনি, খাদ্যশস্য, সার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করা হয়। এ ধরনের বেশির ভাগ জাহাজই বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে।
বন্দর ব্যবহারকারী ও উৎপাদন খাতে যুক্ত শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, মূলত বৈদেশিক বাণিজ্য মন্থর হওয়ার প্রভাবে বদলেছে বন্দরে জাহাজ আসার চিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যে বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিফলন দেখা গেছে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে। আমদানি কমায় প্রায়ই ফাঁকা থেকেছে বন্দরের জেটিগুলো। ডলার সংকট থেকে এখনো বের হওয়া যায়নি। কনটেইনার পরিবহন কম হওয়ার অর্থ হলো শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি আরো কম হয়েছে। এ ধরনের পণ্য বেশির ভাগ আনা-নেয়া হয় কনটেইনারে করে। আবার সমুদ্রপথে পোশাকের কাঁচামাল পুরোটা আনা হয় কনটেইনারে। রফতানিও পুরোটা হয় কনটেইনারে। কার্গো ও কনটেইনার দুভাবেই হ্যান্ডলিং কমেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর প্রভাবই দৃশ্যমান হয়েছে জাহাজ পরিচালন কার্যক্রমে।
জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ক্রাউন সিমেন্ট পিএলসির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিমেন্টের কাঁচামাল চাহিদার তুলনায় আমদানি হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। আমাদের বাধ্য হয়েই উৎপাদন কমাতে হচ্ছে।’
ইস্পাত খাতের আরেক বড় উদ্যোক্তা কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহরিয়ার জাহান রাহাত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম আগের মতো নেই। পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে এখনো সমস্যা কাটেনি। যদিও অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা শিল্প-কারখানা সচল রেখেছি। বন্দরে জেটি খালি আছে, এটা তো একসময় চিন্তাও করা যেত না। যদিও এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে জিনিসপত্র আগের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে জিনিসপত্রের ব্যবহারও বেশ কমেছে।’
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। এজন্য ব্যবসায়ীরাও আগের চেয়ে অনেক ভালো সেবা পাচ্ছেন। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্থরতায় পরিচালন কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে সমুদ্রপথের বাণিজ্য কমেছে। তবে নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট যুক্ত করে বন্দর ব্যবহাকারী ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বিপুলসংখ্যক হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট যোগ করার পাশাপাশি ইয়ার্ডের আয়তন বেড়েছে। সব মিলিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। পণ্য খালাসে জেটিতে বার্থিং পেতে জাহাজকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না।’
source : bonikbarta