search the site
সুইডেনের ইতিহাসের স্বাক্ষী যুদ্ধজাহাজ ভাসা

সুইডিশ যুদ্ধজাহাজ ভাসা। ১৬২৮ সালে জাহাজটি প্রথম সমুদ্রযাত্রার এক মাইলেরও কম সময়ে ডুবে যায়। ৩৩৩ বছর পর প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় সমুদ্রের তল থেকে উদ্ধার করা হয়। এটি এখন স্টকহোমের ভাসা মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। জাহাজটি সতের শতকের বিশ্বের সেরা সংরক্ষিত জাহাজ।
জানা যায়, সতেরো শতকে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া আর সুইডেনের মধ্যে বিরাজ করছিল তীব্র রেষারেষি। সুইডেনের তৎকালীন রাজা, উত্তরের সিংহ হিসেবে পরিচিত গুস্তাভাস দ্বিতীয় অ্যাডোলফ চিন্তা করে দেখলেন বাল্টিক সাগরে নিজেদের একটা শক্তিশালী নৌ অবস্থান তৈরি না করলে নয়। ইতিমধ্যেই কিছু যুদ্ধে পোলিশদের হাতে পড়ে হারাতে হয়েছে কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আদেশ দিলেন, তৈরি করতে হবে দুর্ধর্ষ আর অপ্রতিরোধ্য এক যুদ্ধজাহাজ!
আদেশ দেওয়া হয়েছিল ১৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে, আর ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দেই তৈরি হয়ে যায় ৬৯ মিটার দীর্ঘ, ৫০ মিটার উচ্চতার আর ১২০০ টন ভরের এক দুর্দান্ত যুদ্ধজাহাজ। বসানো হয় ৬৪টি কামান আর শয়ে শয়ে ভাস্কর্য, যেন অবয়বেই পিলে চমকে যায় শত্রুদের। দৈত্যাকার এ জাহাজের নাম দেয়া হলো ‘ভাসা’ (Vasa)!
১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে ১০ আগস্ট। স্টকহোম শহরের হাজারো অধিবাসী আর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ভিড় করেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। ‘ভাসা’র প্রথম যাত্রা দেখবেন তারা। ইতিহাসের সাক্ষী তারা হয়েছিলেন বটে, প্রথম যাত্রায় শিপইয়ার্ড থেকে মাত্র ১৩০০ মিটার দূরেই যে ভরাডুবি ঘটে আশা-ভরসার প্রতীক এই যুদ্ধজাহাজের! অভিজ্ঞ জাহাজ নির্মাতা হেনরিক হাইবার্টসন দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল এই জাহাজের।
জাহাজডুবির পর কেটে গিয়েছিল ৩০০ বছরের বেশি সময়। আন্দেস ফ্রাঁজিয়া নামের এক জ্বালানি প্রকৌশলী বেকহলমেন দ্বীপের সামনে পানির নিচে কাজ করতে গিয়ে খুঁজে পেলেন ওক কাঠের একটি খণ্ড। আরেকবার অনুসন্ধানে আবার খুঁজে পেলেন একই জিনিস। পানির নিচের ওই এলাকায় তবে খুব বড় কিছু আছে, কিন্তু সেটা কী? এটাই সেই বিখ্যাত ‘ভাসা’ নয়তো?
নেভি অভিযান শুরু করল। দ্রুতই আবিষ্কৃত হলো যুদ্ধজাহাজের ভগ্নাবশেষ। কিন্তু এত বছর ধরে পানির নিচে ছিল, শীতল পরিবেশ—এসবই কাঠ পচানো কীটদের পক্ষে অনুকূল; তবে এখন পচে-গলে কিছু কি বাকি আছে জাহাজের? নিয়তিই বটে! জানা গেল, সুয়েজ আবর্জনা নাকি ঘিরে ছিল তাকে, আর তাই এখনো অবশিষ্ট আছে একসময়ের প্রতাপশালী এই জাহাজ।
জাহাজটি সুইডেনের গ্রেট পাওয়ার পিরিয়ডের প্রতীক হিসাবে সামনে এসেছে।
১৯৯০ সাল থেকে জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে জাহাজটি। প্রতি বছর এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শক জাহাজটি দেখে থাকে।