search the site
মেরিনারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করুন

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ :
ব্যক্তিগত তথ্যর গোপনীয়তা শুধু একজন ব্যক্তির নিরাপত্তা ও অধিকারের সাথে সর্ম্পকিত নয়, ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ বড় ধরনের বিপদের কারন হতে পারে। এ কারনে বিশ্বজুড়ে ও উন্নত দেশগুলোতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মেরিনারদের ব্যক্তিগত সব তথ্য এখন পাবলিক ডোমেইনে পাওয়া যাচ্ছে। ব্যক্তিগত পোনীয়তা প্রকাশ হওয়ার কারনে কী ধরনের সম্যা হতে পারে তার একটি চিত্র আমি তুলে ধরছি।
আমি বর্তমানে জাহাজে আছি। জাহাজে নামমাত্র ইন্টারনেট আছে, যা শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং এলাউ করে ৷ আবার অনেক সময় এমন জাহাজে সেইল করি যেখানে অনবোর্ড ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ডিফারেন্ট টাইম জোনের ব্যাপার তো আছেই।
এমন অবস্থার মধ্যে আমার ব্যক্তিগত নাম্বারে একদিন ফোন আসে। জাহাজে থাকলে ব্যক্তিগত ফোনটি দেশে রেখে আসি। হঠাৎ একদিন ফোনটিতে কল আসে। ফোনটি রিসিভ করেন আমার পরিবারের একজন সদস্য। ওপাশ থেকে আমার নাম বলে জিজ্ঞেস করা হয় উনি আমার কে হন? একে একে ওপাশ থেকে আমার বাবা’র নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখ, উচ্চতা, গায়ের রঙ, চোখের রঙ, সনাক্তকরণ চিহ্ন, স্থায়ী ঠিকানাসহ সব বলে জিজ্ঞেস করছে ফোন নাম্বারটা আমারই কিনা।
আমার স্ত্রী, বয়স্ক মা বা অল্পশিক্ষিত বড়ভাই আতঙ্কিত হয়ে যান। যেহেতু আমি জাহাজে থাকাবস্থায় পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে।
আমার পরিবারের যে সদস্য ফোন রিসিভ করেছে তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে ওপাশের ব্যক্তি আমাকে খুব ভালোভাবে চিনেন অথবা আমার খুব কাছের। তা না হলে এতসব ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারো জানার কথা না। এমনও হতে পারে ওপাশের ব্যক্তি আমার এজেন্সির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে টাকা চাইতে পারেন। তিনি বলতে পারেন আমি জাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েছি বা কোথাও কোন জটিলতার সম্মুখীন হয়েছি – এ জন্য বড় অংকের টাকার প্রয়োজন।
এসব শোনার পর আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমার বা অন্য যেকোন মেরিনারের পরিবার ১০ মিনিটও ভাববেনা যে ব্যাপারটা সত্য নাকি মিথ্যা। যেহেতু আমার অবর্তমানে তারা সবসময় চিন্তায় থাকে তাই সাত-পাঁচ না ভেবেই ওই ব্যক্তির কথামতো যা করার করবে। অথবা দ্রুত আমাকে ফোন বা মেসেজ দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারার সম্ভাবনা শূন্য । যেহেতু সারাক্ষণ জাহাজে ইন্টারনেট কানেক্ট করে রাখার সুযোগ নেই। কিংবা সে সময় হয়তো আমি ডিউটিতে বা ঘুমাচ্ছি!
এমন অবস্থায় সে ব্যক্তির কথামতো আমার পরিবারের কেউ ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দিলে তার দায়ভার কাকে দেয়া যায়? আমার পরিবারকে ? যারা আমার চিন্তায় দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে? নাকি তাদেরকে যারা আমার এতসব ব্যক্তিগত তথ্য পাবলিকলি দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে? নি:সন্দেহে ব্যক্তিগত তথ্য যারা প্রকাশ করেছেন তাদের কথা বলবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এতসব সেন্সেটিভ ব্যক্তিগত তথ্য কোথায় পাবলিকলি দেখার কী সুযোগ আছে? আপনি মেরিনার হলে বলতেই হবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন নেই। শিপিং অফিসের ওয়েবসাইটে আপনি ‘সিডিসি অনুসন্ধান- CDC Search’ অপশনে গিয়ে র্যান্ডমলি C/O/XXXXX দিলেই যে কোন মেরিনারের বাবা-মা’র নাম ছাড়াও, স্থায়ী ঠিকানা, ফোন নাম্বারসহ সব একসাথে পেয়ে যাবেন! এ যেন প্রতারক দুষ্টু লোকদের জন্য আলাদীনের চেরাগ। একেকদিন একেক সিডিসি নাম্বার লিখে সার্চ দেবে আর প্রতারনার সুযোগ নেবে।
বিভিন্ন পোর্ট অথোরিটি, শিপিং কোম্পানি, যেকোন এজেন্সি বা যে কারো ভ্যারিফিকেশনের জন্য সিডিসি চেক করার সুযোগ থাকার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু জাস্ট ভেরিফাই করার জন্য ফোন নাম্বার, চোখের রঙ, গায়ের রঙ, ধর্ম, সনাক্তকরণ চিহ্ন ইত্যাদি এত এত ব্যক্তিগত তথ্য পাবলিকলি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বা আদৌ আছে কিনা ভেবে দেখা দরকার। পাবলিকলি শুধুমাত্র মেরিনারের নাম, জন্মতারিখ, সিডিসি ইস্যু ডেট আর
এক্সপায়ারি ডেট দেখালেই যথেষ্ট বলে মনে হয়। বেশি হলে সিডিসি’র সাথে থাকা ছবিটি দেয়া যেতে পারে।
বেশ কয়েকবছর আগে আমার এক জুনিয়র এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে লিখেছিল কিন্তু এখনো ওয়েবসাইটে কোন পরিবর্তন হয়নি। যদিও যে ঘটনার আমি বিবরন দিয়েছি এখনো কোন মেরিনার এভাবে প্রতারনা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু আমোদের সর্তক থাকা উচিত। আমরা জানি, প্রিভেনশন ইজ অলওয়েজ বেটার দ্যান কিউর। যদিও দু:খজনকভাবে, আমাদের দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগে কারও টনক নড়েনা।
সেন্সেটিভ এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশি মেরিনার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং যারা কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার অবস্থানে আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, মেরিনারদের ব্যক্তিগত তথ্যের এই অবাধ উপস্থাপন বন্ধের ব্যাপারে দ্রত পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৭/ই)