search the site
চট্টগ্রাম বন্দরে ২শ মিটার জাহাজ ভিড়ানো শুরু হচ্ছে ‘কমন এটলাস’ দিয়ে
চট্টগ্রাম বন্দরে ২শ মিটার জাহাজ ভিড়ানো শুরু হচ্ছে ‘কমন এটলাস’ দিয়ে
বিশেষ প্রতিনিধি
14 January, 2023
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে প্রথমবার ভিড়ছে ২শ মিটার দীর্ঘ একটি জাহাজ। মার্শাল আইল্যান্ডের ‘কমন এটলাস’ জাহাজটি ব্রাজিল থেকে এসেছে চিনি নিয়ে। আর জাহাজটি খোলা পণ্যবাহি বা ব্রেক বাল্ক। চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে আরো বড় আকারের পণ্যবাহি জাহাজ ভিড়ানো হচ্ছে। মুলত দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যে হারে এগুচ্ছে, সে অনুযায়ী এই বন্দরের জেটি বাড়ছে না। আর জেটি-টার্মিনাল বাড়ানোর উদ্যোগের বাস্তবায়নও দীর্ঘায়িত হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিদ্যমান সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সামালের উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সেদিন বড় জাহাজ ভিড়ানো কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
শিপিং কম্পানি জেএসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিমুল মজুমদার বলেন, ‘বহির্নোঙরে একটি জাহাজ থেকে পণ্য লাইটারিং বা স্থানান্তর করতে যে পরিমান সময় নষ্ট, পণ্য অপচয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয় তার লাঘব হবে। আমদানিকারক সরাসরি জেটিতেই জাহাজ ভিড়িয়ে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। আগে থেকেই এই উদ্যোগ নিলে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়তো। এখনকার সিদ্ধান্ত এককথায় যুগোপযোগি।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে শিপিং বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি অেনক উজ্জ্বল হবে। এককথায় সোনায় সোহাগা হবে বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে এখন সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট বা গভীরতা এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের পণ্যবাহি জাহাজ ভিড়তে পারে। নতুন উদ্যোগের ফলে ১০ মিটার গভীরতার এবং ২শ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়বে বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজে ১৬শ একক কন্টেইনার; সাড়ে নয় মিটার গভীরতার জাহাজে ২২শ একক; ১০ মিটার গভীরতার জাহাজে ২৬শ একক কন্টেইনার পরিবহনের সুযোগ আছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২৪শ একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। এখন দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার ও ড্রাফট ১০ মিটারে উন্নীত করা হলে সর্বোচ্চ ৩ হাজার একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে একটি জাহাজেই একসাথে বেশি পণ্য উঠানামা করা সম্ভব হবে। সময় সাশ্রয় হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, বড় জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা যাচাই করতে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ওয়েলিংফোর্ডকে দিয়ে জরিপ চালিয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। সুপারিশ অনুযায়ী জেটিতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আনতে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর গুপ্তবাঁক কিছুটা সহজ করা হয়েছে; আউটার বারে নিয়মিত নদী খনন চলছে। এখন বড় আকারের জাহাজ জেটিতে আনতে পাইলটদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতেই প্রথমবার ১৯০ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে নয় মিটার গভীরতা বা ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো শুরু হয়। এর আগে এতবড় জাহাজ জেটিতে ভিড়ানোর সুযোগ ছিল না। প্রায় সাত বছর পর এখন ২০২৩ সালে এসে আরো বড় আকারের জাহাজ ভিড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট জেটি আছে ১৮টি। এরমধ্যে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) বড় আকারের কন্টেইনার জাহাজ ভিড়ানো যায়। আর জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের জাহাজ ভিড়ানো হয়; যেখানে কন্টেইনার এবং সাধারন পণ্য দুই ধরনের জাহাজ জেটিতে ভিড়ানো যায়। বন্দরের অনুমতি থাকলেও জিসিবিতে পানির গভীরতা কম থাকায় সেখানে বড় জাহাজ ভিড়ানো যায় না। যেমন, বন্দরের জিসিবি’র ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে সাড়ে আট মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যায়। আর ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ভিড়তে পারে সাড়ে নয় মিটার গভীরতার জাহাজ। এর মধ্যে মাত্র ৬টি জেটিতে ভিড়তে পারে কন্টেইনারবাহী জাহাজ। বাকি জেটিগুলোতে বাল্ক বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ে।