Gratitude to BMA & BD Mariners: by Abdullah-Al-Mahmud 47E

Comments Off on Gratitude to BMA & BD Mariners: by Abdullah-Al-Mahmud 47E
OUR PRIDE, OUR INSPIRATION – F R Chowdhury (1st Batch) | Bangladeshi  Mariners

Gratitude to BMA & BD Mariners

by Abdullah-Al-Mahmud 47E

4 September 2020

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে চান্স পাওয়া আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। ইন্টারের পরে কোথায় ভর্তি হবো না হবো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বড়দার সাথে যখন আলোচনা করছিলাম তখন বড়দা বললো, যাই করিস না কেন, আমার মতো ডাক্তার হবি না! আমি তোকে ডাক্তার হতে বললে পরে আজীবন আমাকে গালি দিবি যে জেনেশুনে কেন তোকে মেডিকেলে ভর্তি হতে বললাম! আমি বললাম, তাহলে আর্মিতে ট্রাই করি বড়দা? আর্মিতে গেলে তোর নিজের কোন স্বাধীনতা থাকবেনা। সবাই তোর নাম ভেঙে খাবে। আমি বলবো আমার ভাই মেজর। তোর ছেলেমেয়ে বলবে, আমার বাবা মেজর। তুই আজীবন দৌড়াবি ক্যান্টনমেন্টে আর বাইরে সবাই ভাব নিয়ে থাকবে তাদের ভাই-বাবা-জামাই মেজর বলে-বড়দা ব্যাখ্যা করে বুঝালো। এরপর মেরিনার হওয়ার কথা বলতেই বললো, এটা তো খারাপ না! ট্রাই করতে পারিস। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবি, ৬ মাস পর পর ছুটিতে আসবি। সব ভেবে শেষমেশ মেরিনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সত্যি বলতে মেরিন/মেরিনারদের সম্পর্কে স্বচ্ছ কোন ধারণাই ছিলনা একাডেমিতে ভর্তির আগ পর্যন্ত। ভর্তি হয়ে দেখলাম এটা বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি নয়, বাংলাদেশ মরণ একাডেমি! এখানে নাকি যত পাংগা তত চাংগা!! সিনিয়রদের দেখে মনে হতো, এরা কিভাবে পারে জুনিয়রদের সাথে এমন করতে!? আমার স্পষ্ট মনে আছে বড়দাকে চিঠিতে লিখেছিলাম, পৃথিবীর আর কোথাও এমন কষ্টদায়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে কিনা আমার জানা নেই!

জয়েনিংয়ের ৫-৬ মাস পর থেকেই স্যারদের সাথে সম্পর্ক সহজ হতে থাকে। এটাই একাডেমির ট্র‍্যাডিশান। পরে এই চাংগা করা সিনিয়রদের জন্যই কেঁদেছিলাম তাদের বিদায়ের দিনে।

২ বছরের একাডেমিক জীবনে মাত্র ১ বছর করে সিনিয়র-জুনিয়রদের পেয়েছি। অর্থাৎ আমি ৪৭তম ব্যাচের ক্যাডেট, ৪৬ তম ব্যাচের স্যারদের সাথে ১ বছর আর ৪৮ তম ব্যাচের জুনিয়রদের সাথে ১ বছর কাটিয়েছি। এরমধ্যে নানা ধরনের ছুটিও ছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ে এত গভীর সম্পর্ক আমাদের মাঝে গড়ে উঠে যেটা অবিশ্বাস্য! শুধুমাত্র ইমিডিয়েট সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথেই নয়, একাডেমির প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের এত আন্তরিক সম্পর্ক যা সাধারণত দেখা যায়না। শুধু বললেই হলো, আমি একাডেমি ক্যাডেট, ব্যস!

পাসিং আউটের পর একাডেমি, একাডেমির সিনিয়র-জুনিয়র কি জিনিস তা আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি। আমি ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে জয়েন করার সুযোগ পাই ২৫ তম ব্যাচের এক স্যারের মাধ্যমে। স্যার আমাকে উনার ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে ২৬ তম ব্যাচের আরেক স্যারের অফিসে পাঠিয়েছিলেন আমার জয়েনিংয়ের ব্যাপারে । উল্লেখ্য যে, আমারই এক ব্যাচমেট সেই ২৫ তম ব্যাচের স্যারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তিতে সেই স্যারের অনুরোধে আমি জাহাজে জয়েন করেছিলাম এবং আল্লাহর রহমতে একটানা ১৫ মাস ১৪ দিন ক্যাডেট হিসেবে ছিলাম!

আমি পাসিং আউটের ৭ মাস পর জাহাজে জয়েন করেছিলাম। এই ৭টা মাস যে আমার কিভাবে কেটেছিল সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। একদিকে আব্বার ডায়ালাইসিসের মাত্রাতিরিক্ত খরচ, অন্যদিকে আমি বেকার বসে আছি। আমার দেখা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে সংকটময় সময় ছিল সেটা। খুব আশা ছিল প্রথম ইনকামের টাকা আব্বার হাতে তুলে দিবো  কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে আশা পূরণ করার সুযোগ পাইনি।  সেই ৭ মাসের দুঃসহ সময়ে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিয়েছিলেন ১৫ তম ব্যাচের এক স্যার। আমি হতাশায় নির্ঘুম থেকে রাত ২/৩টায়  মেসেজ দিয়ে দেখতাম ভোর ৬ টায় স্যার রিপ্লাই দিয়েছেন! স্যারকে সময় অসময়ে মেসেজের পর মেসেজ দিয়েছি কিন্তু কখনো বিরক্ত হননি। বড়দা বলতেন, একমাত্র তোদের প্রফেশনেই হয়তো এমন মানুষ হয়। আমাদের কোন সিনিয়র তো মেসেজ/মেইল পড়েও দেখবেনা, রিপ্লাই তো দূরের কথা! সেই স্যার অনেকভাবে অনেকবার তার সিনিয়র-ব্যাচমেটকে বলেছিলেন আমার জবের জন্য কিন্তু উপযুক্ত সুযোগের অভাবে জয়েনিং হয়নি। তবে স্যারের আন্তরিকতার এতটুকু কমতি ছিলনা।

পাসিং আউটের পর থেকে এই ৮ বছরে কতভাবে যে কত সিনিয়র স্যারের সাহায্য পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কয়েকটা ঘটনা বলি…

১০ তম ব্যাচের এক স্যার সিংগাপুর থাকেন। ঢাকাতে উনার ব্যবসা আছে। স্যার সিংগাপুর থেকে ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, আমি চাইলে আপাতত জয়েন করতে পারি তার ঢাকা অফিসে। এরপর জাহাজে জয়েনিং এর সুযোগ হলে চলে যাবো যেকোন সময়। উনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন না, শুধু একাডেমির জুনিয়র হিসেবেই এ সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছিলেন।

২৫ তম ব্যাচের এক স্যার আমাকে পাসিং আউটের পর থেকেই সাপোর্ট দিচ্ছেন সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে! যখন যেভাবে পেরেছেন আমাকে সাহায্য করেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায়ই ফোন দিয়েছেন। বলেছেন যদি কখনো টাকার দরকার হয় স্যারকে যেন জানাই! যেখানে নিজের অনেক আত্মীয়স্বজন থেকেই বিপদের সময় ৫ হাজার টাকা পাইনি সেখানে স্যার আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন শুধুমাত্র একাডেমির জুনিয়র হিসেবে! তাও সে সময় যখন আমার সামনে কোন আশা-ভরসা ছিলনা। আজও পর্যন্ত স্যারকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার।

২০১৫ তে ক্লাস-থ্রি সিওসি পাবার পর হোয়াটসঅ্যাপে দেশ-বিদেশের অসংখ্য সিনিয়র মেরিনারদের মেসেজ দিয়েছি একটা জবের জন্য। অনেকেই সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেছিলেন, সিভি নিয়েছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে একদিন ২৯ তম ব্যাচের এক স্যার সিংগাপুর থেকে ফোন করে বললেন,  সিংগাপুরের অন্যতম সেরা একটা কোম্পানি থেকে শীঘ্রই আমার সাথে যোগাযোগ করা হবে। আমি যেন সবসময় ফোন চালু রাখি, রেগুলার ইমেইল চেক করি। সাথে এটাও বললেন, সিলেকশনের পর যদি এজেন্সি কোন ধরনের চার্জ দাবী করে আমি যেন সরাসরি স্যারকে জানাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন ধরনের তথাকথিত সার্ভিস চার্জ ছাড়া, সরাসরি অফিসার হিসেবে  র‍্যাংকের সেরা বেতনে জয়েন করেছিলাম। উল্লেখ্য, সেই কন্ট্রাক্টটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। সেই কন্ট্রাক্টটের জন্যই পরিবারের সমস্ত আর্থিক ঋণ দ্রুততম সময়ে শোধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

অফিসার হিসেবে প্রথম কন্ট্রাক্ট শেষ করার পর প্রায় নয় মাস অপেক্ষা করেছিলাম। ন’মাস পর দ্বিতীয় কন্ট্রাক্ট করার সুযোগ পেয়েছিলাম ২৪ তম ব্যাচের এক স্যারের আন্তরিকতার জন্য। আমার জয়েনিং ডিলে নিয়ে সমস্যার কথা বলার পর স্যার নিজে উদ্যোগ নিয়ে আমার ইউ.এস ভিসা করানোসহ রি-জয়েনিংয়ের সমস্ত কাজে সাহায্য করেছিলেন।

২৪ তম ব্যাচের আর একজন স্যারের সাথে যোগাযোগ আছে যিনি মার্কস লাইনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। স্যার মার্কসে এমন কোন কাজ নেই  করেননি আমাকে জয়েন করানোর জন্য! স্যার আমাকে প্রতিনিয়ত মেসেজের রিপ্লাই দিতেন এত ব্যস্ততার মাঝেও। স্যারের সাথে প্রথম যেদিন কাকতালীয়ভাবে ধানমন্ডি দেখা হলো সেদিন আমার স্ত্রী  তিথিও সাথে ছিল। স্যার নিজে এসে আমাদের তার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ভাবী তিথিকে নিজের  স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দিয়েছিলেন নতুন বউ দেখে। স্যার বাসায় অনেক সময় দিয়ে রেস্টুরেন্টে ডিনার করিয়ে এরপর আমাদের ছেড়েছেন। অথচ স্যারের সাথে আমার পরিচয়-কথাবার্তা হোয়াটস এপে শুধুমাত্র একাডেমির একজন জুনিয়র হিসেবে।

বছরখানেক আগে আমার এক আত্মীয়ের জরুরি কিছু টাকার দরকার হয়েছিল। আমি জাহাজ থেকে পাঠাতে গেলে সময়-ঝামেলা দুটোই বেশি লাগবে ভেবে ৩৪ তম ব্যাচের এক স্যারকে মেসেজ দিয়েছিলাম। স্যার আমাকে তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কবে কত টাকা লাগবে! জানানোর ১ দিনের মধ্যেই স্যার ১০০০ ডলার ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন!

২০১৮ তে সিংগাপুরে ক্লাস টু দেয়ার সময়ে ৪৪, ৪৫, ৪৬ তম ব্যাচের স্যারদের আর ৪৮ তম ব্যাচের একমাত্র জুনিয়রের আন্তরিকতার কথাও কখনো ভুলার নয়।

কিছুদিন আগে করোনার লকডাউনে তিথি-তাজমীন অস্ট্রেলিয়া আটকা পড়লে অস্ট্রেলিয়াতে থাকা ১০তম ব্যাচের এক স্যার বলেছিলেন, “If your family needs any help please let me know.” বিপদের সময় এমন ছোট্ট একটা মেসেজ যে কতবড় মানসিক সাপোর্ট তা বলে বোঝানো যাবেনা।

শুধু যে একাডেমির সিনিয়ররাই আন্তরিক তেমন না। একাডেমি ছাড়াও অনেক ক্যাপ্টেন-চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যারের সাহায্য ভালোবাসা পেয়েছি যাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।

সিলেট ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেট একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যার ২০১৫ থেকে বিভিন্নভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আমার জব দেয়া থেকে ইউ.এস ভিসা করানোর জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন।

সিংগাপুরে ক্লাস টু দেয়ার সময় পহেলা বৈশাখের প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে এক স্যার নিজে আমাদের বাসার নিচে এসেছিলেন পিক করতে। ভাবী-ভাতিজিদের সাথে আমাদেরকে একই গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছেন আবার নামিয়ে দিয়েছেন। কতটুকু আপন মনে করলে নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে জুনিয়রদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তা সহজেই অনুমেয়।

এমন আরো অনেক অনেক ঘটনা আছে সিনিয়র জুনিয়রদের নিয়ে যা বলে শেষ করা যাবেনা। সিনিয়রদের আন্তরিকতা দেখে আমি প্রতিনিয়ত অবাক হই। সবাই এত বিনীত, এত বিনয়ী। ভাবি, যদি আমিও হতে পারতাম তাদের মতো। আমার মতো একজন জুনিয়রকে যে এত ব্যস্ততার মধ্যেও সবসময় রিপ্লাই দেন এটাই তো আমার জন্য কত বড় প্রাপ্তি !

ভালো খারাপ দুনিয়ার সবখানে আছে-থাকবে এটাই নিয়ম। আমাদের একাডেমি বা প্রফেশনের শতভাগ যে ভালো সেটা না। আমি নিজেও বেশ কয়েকজন খারাপ এক্স-ক্যাডেট, মেরিনারদের দেখেছি যারা জুনিয়রদের নিয়ে ব্যবসা করে, সিনিয়র বলে সবসময় জুনিয়রদের থেকে বিভিন্নভাবে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে জুনিয়রদের অজ্ঞতা বা বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে। কিন্তু সেসব গুটিকয়েক মেরিনার,  এক্স-ক্যাডেটদের জন্য বাকি হাজারো সাদা মনের মেরিনারদের ভালো ব্যাপারগুলো প্রকাশ না করাও আমার কাছে অন্যায় বলে মনে হয়। সবখানে, সব ব্যাচেই কিছু অপ্রত্যাশিত ভাইরাস থাকে যা ফিল্টারিং এর সুযোগ নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যতটুকু দেখেছি,  মেরিনারদের মধ্যে সে খারাপের অনুপাত খুবই নগন্য। হয়তো হাজারে ৮-১০ জন! হয়তো এই ৮-১০ জনের জন্যই বাকিরা কত ভালো তা সহজে উপলব্ধি করতে পেরেছি।

আমি অত্যন্ত গর্বিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির একজন ক্যাডেট হতে পেরে, বাংলাদেশ মেরিন কমিউনিটির একজন হতে পেরে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ পৃথিবীতে অদ্বিতীয় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাংগা খেয়ে চাংগা হওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য….

Comments are closed.