কতদিন সচল রাখা যাবে চট্টগ্রাম বন্দর?

Comments Off on কতদিন সচল রাখা যাবে চট্টগ্রাম বন্দর?

মাসুদ মিলাদ, চট্টগ্রাম১৩ এপ্রিল ২০২০

জাহাজ থেকে নামানো কনটেইনার কখন ব্যবসায়ীরা খালাস করে নেবেন সেই তথ্যই এখন সবচেয়ে বড় বন্দর কর্মকর্তাদের কাছে। কারণ আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার রাখার জায়গা কার্যত নেই বন্দর চত্বরে। ফলে বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার খালাস হলে নতুন করে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো যাবে। তাতে বন্দরের কার্যক্রম আরও কিছুদিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। কতদিন এভাবে চলবে সেটি এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই আনা–নেওয়া হয়। করোনার এই সময়ে নিত্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল আসছে এই বন্দর দিয়ে। ফলে দেশের খাদ্য সরবরাহ এবং জীবন রক্ষাকারী কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ রাখতে বন্দর সচল রাখা সবচেয়ে জরুরি।

বন্দরের কার্যক্রম এখন কেমন তা কয়েকটি সূচক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। গত বছর গড়ে প্রতিদিন জাহাজ থেকে আট হাজার একক কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দিনে তা তিন হাজার ৬০০ একক কনটেইনারে নেমে এসেছে। আবার গত বছর বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ৮০০ একক কনটেইনার খালাস হতো, এখন হচ্ছে এক হাজার ৬১০ একক কনটেইনার। আগে একটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানোতে সময় লাগত গড়ে আড়াই দিন। এখন লাগছে চার থেকে পাঁচ দিন। সময় বেশি লাগার কারণ হলো জেটিতে কনটেইনার রাখার জায়গা নেই। জেটিতে ভিড়ানোর জন্য সাগরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বেড়ে ২৮টিতে উন্নীত হয়েছে। সবমিলিয়ে বন্দরের স্বাভাবিক সক্ষমতার ৪০-৪৫ শতাংশের বেশি কার্যক্রম করা যাচ্ছে না।

বন্দরে এসব সমস্যার সমাধান একটিই– তা হলো আমদানিকারকেরা বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার পণ্য খালাস নেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো। বন্দরের বিদায়ী চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দিনে যদি আড়াই হাজার কনটেইনার খালাস হয় তাহলে বন্দর কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সহজ হবে।

এর কারণ হলো, কনটেইনার খালাস হলে বন্দরে নতুন করে কনটেইনার রাখার জায়গা বাড়ত। জাহাজ থেকে কনটেইনারও দ্রুত নামানো যেতো। পালাক্রমে বহিনোর্ঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যাও কমে স্বাভাবিক হয়ে যেত বন্দর। আমদানিকারকেরা কেন কনটেইনার খালাসের হার বাড়াচ্ছেন না, এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাধারণ ছুটির সময় পরিবহন ও শ্রমিক সংকট রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় কোথায় রাখা হবে আমদানি কাঁচামাল এসব বিষয়ও তারা বলছেন। আবার খালাস না করলেও বন্দরে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের কোনো ভাড়াও দিতে হচ্ছে না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বন্দর কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটির সময় আমদানি হওয়া কনটেইনার রাখার ভাড়া মওকুফ করেছে। এই সুবিধা এখন বুমেরাং হয়েছে বন্দরের জন্য।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপের কারণে সব কার্যক্রমই সীমিত হয়েছে। সাধারণ ছুটির সময়ে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীরা কনটেইনার খালাস করতে পারছেন না। সংকট থাকার পরও যাতে ব্যবসায়ীরা কনটেইনার খালাসে এগিয়ে আসে সে আহ্বান জানাই। কারণ আমদানি করা খাদ্যপণ্য ও জরুরি পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে বন্দর পুরোপুরি সচল রাখতে হবে। প্রয়োজনে আমদানি পণ্য খালাসের প্রক্রিয়াগত জটিলতা শিথিল করে দেওয়া উচিত।

ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাসের হার বেশি না বাড়লেও বিকল্প পথ আছে আরও একটি। তা হলো বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে এখনও ২০ হাজার কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। বন্দর থেকে ডিপোতে কনটেইনার পণ্য নিতে হলে রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন লাগবে। এখন ৩৮ ধরণের কনটেইনার পণ্য বন্দর থেকে ডিপোতে নিয়ে খালাস করা যায়। এই সংখ্যা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বাড়ানো যেতে পারে। তাহলেও বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা তৈরি হবে।

করোনার সময়ে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়াও কঠিন। কারণ করোনার ঝুঁকি এড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হচ্ছে বন্দরকে। আবার বন্দর সচল রাখার জন্য যে অর্ধশত সরকারি–বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোও সীমিত আকারে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বন্দর যে শুধু বন্দরের ওপর চলে না, সেটি আবারও দেখা গেছে এই করোনা সংকটের সময়। এখন যেভাবে চলছে তাতে বন্দরের কার্যক্রম খুব বেশিদিন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় কাল মঙ্গলবার একটি সভা ডেকেছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে সকালে সার্কিট হাউসে।

জানতে চাইলে বন্দরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহারকারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পণ্য খালাসের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বন্দরে এখন যে সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাল সভায় সেগুলো তুলে ধরবো।

Comments are closed.