একজন শফিকুরের  জীবন দর্শনে গলদ বনাম মহত্ত্ব 

Comments Off on একজন শফিকুরের  জীবন দর্শনে গলদ বনাম মহত্ত্ব 

একজন শফিকুরের  জীবন দর্শনে গলদ বনাম মহত্ত্ব 

মিনার রশীদ      28 November 2018

অস্ট্রেলিয়া থেকে ২৪তম ব্যাচের ক্যাপেটেন সাদিকের একটি ম্যাসেজ পেয়েছি । ওদের ব্যাচের ইন্জিনিয়ার শফিকুর রহমানের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়েছে । বর্তমানে খুবই  খারাপ অবস্থায় পৌছে গেছে  । ওর সম্পর্কে দু কলম লিখতে আমাকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে ।

ইন্ডিয়ান  ডাক্তার শফিকুরকে টাইম  বেঁধে দিয়েছে , বলেছে  রোগীকে নিয়ে বর্ডার অতিক্রম করে দেশে পৌছতে পারবে কি না সন্দেহ । সেই রোগীকে নিয়ে বর্ডার ক্রস করেছে , এখনো বেঁচে আছে । ডাক্তার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরেও পরম করুণাময়ের ইচ্ছায় ও এখনো বেঁচে আছে । মহান আল্লাহর পরিকল্পনার অনেক কিছুই আমাদের অজানা । ভালো মানুষগুলি কেন এত কষ্ট পায় , এত কঠিন পরীক্ষার মধ্যে কেন পড়ে ? ২৪ ব্যাচের ওদের বন্ধুদের মত এই প্রশ্নটি অনেকের মনে জেগেছে ।

আমরা কেউ কখনো মৃত্যুর প্রতীক্ষা করি না , পরম করুণাময়ের অপার রহমতের আশায় চেয়ে থাকি ।

ওর স্ত্রী , ওর তিন সন্তান , বড়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে , ছোটটি চার বছর বয়েসী সকলেই পরম করুণাময়ের অপার রহমতের পানে চেয়ে আছে ।

এই শফিকুর রহমানের জীবন সংগ্রামের গল্পটিও খুবই কৌতুহলোদ্দীপক ।

একই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডে  থাকায় শফিকুর রহমানের জীবন সংগ্রামটি আমাদের অনেককেই হয়তোবা স্পর্শ করবে ।  জীবনের শুরুতেই  বাবা মা ভাইবোনের সকল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে ।  যখন নিজের সন্তান সন্ততির  জন্যে একটু করার অবকাশ  সৃষ্টি হয়েছে , তখনই নিজের জন্মদাত্রী  মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন  ।

বাবা-মা ভক্ত শফিকুর দিশেহারা হয়ে পড়েন । এখানেই এসে  মারাত্মক ভুলটিও করে বসেন । নিজে আরো বেশি বেশি সেইল করে মায়ের জন্যে সর্বোত্তম চিকিৎসাটি করাতে পারতেন । তা না করে নিজেই হোমিও চিকিৎসক হয়ে মায়ের ক্যান্সার আরোগ্যের চিন্তা করে বসলেন । আমরা জানি ,  ক্যান্সার বা কঠিন রোগ হলে শুধু একজন রোগীই মরে না , সাথে সাথে পুরো পরিবারটিই পথে বসে যায় । প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায়  অমানবিকতার   এই দিকটি  শফিকুর রহমানের মনে বেজেছে বলেই হয়তো স্বল্প্ পয়সায় সকলের চিকিৎসার জন্যে নিজে এই উদ্যোগটি নিয়েছেন ।

এখানে হয়তোবা , একটু আদর্শিক ও মানবিক চিন্তা কাজ করেছে । সেটাই আজ তার বোকামি বলেই অনেকের কাছে মনে হচ্ছে । শফিকুর রহমান শুধু নিজের মায়ের আরোগ্যই চান নি । তিনি চেয়েছিলেন চিকিৎসার নামে এই অমানবিকতা বন্ধ করতে । সেটি করতে গিয়ে নিজের ও পরিবারের জন্যে আরো সংকট টেনে এনেছেন ।

এখন একদিকে তার   চিকিৎসা এবং অন্যদিকে  সন্তানদের লেখাপডা এবং পরিবারের  খরচ  চালানো  নিয়ে   মহা সংকটে পড়েছে তার স্ত্রী ।  তার ব্যাচমেইট ও নিকট বন্ধুরা এতদিন সহযোগিতা করে এসেছেন । সব কিছু সামাল দেয়া বন্ধুদের জন্যেও কঠিন হয়ে পড়ছে । তাই আমাদের সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ।

জীবন নিয়ে  শফিকুর রহমানের এই  ভাবনায় মারাত্মক গলদ বা বোকামি  থাকতে পারে  কিন্তু তার ভাবনার  মানবিক আবেদনটি  কোনওভাবেই অগ্রাহ্য করা যাবে না । এই বোকা শফিকুররা এখনো আছে বলেই সমাজের গ্রন্থিটি এখনো টিকে রয়েছে ।

আমার এই লেখাটি মেরিন কমিউনিটির যে সব সদস্যের চোখে পড়বে  তাদের প্রত্যেকের কাছে আবেদন , এই মানবতাবাদী সুন্দর মনের মেরিনারটির বিপদে সকলে এগিয়ে আসুন । যে যতটুকু পারেন , সহযোগিতার হাতটি প্রসারিত করুন ।

আমাদের মাঝে  সবাই এগিয়ে এলে এবং সামান্য সুদৃষ্টি দিলে  এই পরিবারটি একটি মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে ।

PLEASE NOTE Please note below the bank account of Mrs. Shafiqur Rahman:

Mos Rahima Begum, Mudaraba Savings Account Number: 0081120492829, Al-Arafah Islami Bank, Bogra

Comments are closed.