ACC is submitting a complaint against Engineer S.M. Nazmul Haque

Comments Off on ACC is submitting a complaint against Engineer S.M. Nazmul Haque

ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার

নৌপরিবহনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নাজমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুদক

প্রথম আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৫৮
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৫৯

ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক। প্রথম আলো ফাইল ছবিঘুষের পাঁচ লাখ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে সংস্থাটি। আজ বুধবার কমিশন এ অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, কমিশন অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

চলতি বছরের ১২ এপ্রিল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি হোটেল থেকে ফাঁদ পেতে ঘুষের ৫ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয় এসএম নাজমুল হককে। ওইদিনই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় রাজধানীর শাহবাগ থানায়। এর পাঁচ মাস পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে বেরিয়ে আসেন নাজমুল হক।

মামলার তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ। তাঁর তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন আজ অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার মামলা, ৬ মাসেও অভিযোগপত্র হয়নি শিরোনামে গত সোমবার প্রথম আলো অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর এক দিন পরই কমিশন অভিযোগপত্র অনুমোদন দিল।

দুদক সূত্র জানায়, সৈয়দ শিপিং লাইনস নামের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে সব আইনগত প্রক্রিয়া শেষে ফাঁদ পাতে দুদক। পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে সেগুন রেস্তোরাঁয় আসার কথা বলেছিলেন নাজমুল হক। সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল দুদকের দলটি। ঘুষ নেওয়ার পরপরই দুদকের দলটি হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে নাজমুল হককে।

সৈয়দ শিপিং লাইনের জাহাজের রিসিভ নকশা অনুমোদন ও নতুন জাহাজের নামকরণের অনুমোদনের জন্য ১৫ লাখ টাকা ঘুষ চান নাজমুল। এর মধ্য থেকে পাঁচ লাখ টাকা আগেই নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় কিস্তির পাঁচ লাখ টাকা নিতে গিয়ে দুদকের ফাঁদে পড়েন তিনি।

নাজমুলের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ:
এস এম নাজমুল হকের বিরুদ্ধে ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ জীবননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সৈয়দ শিপিং লাইনসের মালিক সৈয়দ জালাল উদ্দিনের ছেলে সৈয়দ সোহাগ সম্প্রতি রাজধানীর রমনা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি বলেন, নাজমুল হকের হুমকির কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ ছাড়াও সৈয়দ সোহাগ দুদকের চেয়ারম্যান, দুই কমিশনার, মহাপরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে বের হয়ে নাজমুল হক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জে লোকজন পাঠিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবার কাছ থেকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন লঞ্চ টার্মিনালে তাঁকে ধরার জন্য লোক নিযুক্ত করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে সৈয়দ সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, নাজমুল হক তাঁকে চাপে রাখার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছেন। জাহাজের কাগজপত্র থেকে শুরু করে সব কিছুতে খুঁত বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। তবে, জিডি করা এবং দুদকে অভিযোগ করার পর আপাতত হুমকি ধমকি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কা কমেনি বলে জানালেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে এস এম নাজমুল হকের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি।

দীর্ঘ অনুসন্ধানেও তাঁর নাগাল পায়নি দুদক!

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম গত বছরের ১৮ জুলাই দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মন্ত্রণালয় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ২০ আগস্ট এস এম নাজমুল হক প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পান। ২০১৪ সাল থেকে নাজমুল হকের বিরুদ্ধে দুদকে অনুসন্ধান চলমান থাকলেও পদোন্নতিতে সেটা কোনো বাধাই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাঁটিয়ে নাজমুল হক প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। আর দায়িত্ব পেয়েই নানা দুর্নীতিতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছ।

সমুদ্র অধিদপ্তরের শিপ সার্ভেয়ার ও পরীক্ষক থাকার সময় এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৪ সালে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধান শুরুর দুই বছর পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকে সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মোহাম্মদ ইব্রাহিম নাজমুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। কমিশন সভায় ওই সুপারিশ নাকচ করে আবারও অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক হামিদুল হাসানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। হামিদুল হাসানও অজ্ঞাত কারণে তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন। গত বছরের মাঝামাঝি নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় উপপরিচালক বেনজির আহমেদকে। তিনি নাজমুলের সম্পদ বিবরণী তলব করলে নাজমুল একটি বিবরণী জমা দেন। এর মধ্যেই হঠাৎ করে ঢাকার বাইরে বদলি হন বেনজীর আহমেদ। এ বছরের শুরুতে সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ পরের পর্যায়ের অনুসন্ধান শুরু করেছেন নাজমুলের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়াও নাজমুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে আলাদা আরেকটি অনুসন্ধান শুরু করে। সেটিরও কোনো অগ্রগতি নেই।

Comments are closed.