search the site
ফিশারিজ ক্যাডেটদের সিডিসি -মেরিটাইম খাতে বাড়বে বেকার
কামরান সিদ্দিকী
ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেটদের সিডিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) প্রদান নিয়ে মেরিটাইম খাতে নতুন করে নৈরাজ্যের আশঙ্কা করছেন মেরিনাররা। এতে একদিকে মেরিটাইম খাতে বাড়বে বেকারত্বের হার, অন্যদিকে ফিশিং খাতে জনবল সংকট আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন তারা। তবে সিডিসি অর্জনে ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেটরা সম্পূর্ণ যোগ্য বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
দেশি-বিদেশি জাহাজ পরিচালনায় অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা পূরণে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি। নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন একাডেমিটি স্বীকৃতি পায় ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ১৪ শাখার একটি হিসেবে। বাংলাদেশি মেরিনাররা বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে নিয়োজিত আছেন। অন্যদিকে মৎস্যসম্পদ আহরণে প্রতিষ্ঠিত হয় আলাদা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন এ একাডেমির ক্যাডেটরা মৎস্য আহরণের জাহাজে অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন।
সম্প্রতি ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেটদের সিডিসি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সিডিসি পেলে মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের মতো তারাও বাণিজ্যিক জাহাজে গমনের সুযোগ পাবেন। এর আগেও একাধিকবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়; কিন্তু তা বেশিদূর এগোয়নি। সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে সিডিসি প্রদানের জন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সমকালকে
বলেছেন, ফিশিং বোটে পাঁচ বছর কাজ করার পর কেউ সিডিসির জন্য আবেদন করতে পারে। এর বাইরে আইনত অন্য কোনোভাবে ফিশারিজ ক্যাডেটদের সিডিসি দেওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা বিষয়ে তিনি বলেন, এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। এ বিষয়ে মতামত যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মেরিটাইম সেক্টরের ক্ষতি হয় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের ব্যত্যয় ঘটে, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মৎস্য খাতে জনশক্তির চাহিদা জ্যামিতিক হারে বাড়লেও ধস নামে মার্চেন্ট মেরিন সেক্টরে। ভিসা জটিলতা, দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ ২৮-এ নেমে আসা, ১৮টি প্রাইভেট মেরিন একাডেমির অনুমোদন, সরকারি-বেসরকারি একাডেমির ক্যাডেট সংখ্যা বৃদ্ধি, জাল সনদপ্রাপ্ত অযোগ্য নাবিক রফতানিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোর নিয়োগ বন্ধ প্রভৃতি কারণে এ খাতে বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত নাবিক। ইতিমধ্যে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ক্যাডেট সংখ্যা ৩০০ থেকে কমিয়ে মাত্র ৫০ জনে নামিয়ে এনেছে। আর বেসরকারি ১৮টি একাডেমির ১৫টি ক্যাডেটশূন্য অবস্থায় বন্ধের দোরগোড়ায়। এ অবস্থায় ফিশারিজ সেক্টর থেকে ক্যাডেটদের বাণিজ্যিক জাহাজে যোগদান করানোকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন তারা।
এ বিষয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও ঢাকা শিল্প বণিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফ ইবনে-নুর সমকালকে বলেন, মেরিন একাডেমি থেকে এসটিসিডবি্লউ-২০১০ অনুযায়ী প্রশিক্ষিত ক্যাডেটরা একমাত্র সিডিসি অর্জন করে বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরির জন্য যোগ্য। আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হওয়ায় ফিশারিজ ক্যাডেটদের বাণিজ্যিক জাহাজে নিয়োগ দিলে আইএমওর সাদা তালিকা থেকে বাংলাদেশের বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্র পরিবহন সেক্টর ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিপন্ন হবে।
তবে এ বিষয়ে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান আহমেদ সমকালকে বলেন, তাদের ক্যাডেটরা সিডিসি পাওয়ার জন্য শতভাগ যোগ্য। কারণ মেরিন একাডেমির একই কারিকুলাম ও সিলেবাস তারা অধ্যয়ন করেন। তাদেরকে সাড়ে তিন বছরের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হয়। মার্চেন্ট শিপিংয়ে তাদের ৮৫০ জন ক্যাপ্টেন ও ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন।
ফিশিং খাতে জনবল সংকট :গত ১০ বছরে দেশের ফিশিং জাহাজে সনদধারী কর্মকর্তার তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ২৩৬টি ফিশিং জাহাজের জন্য মাত্র ৯৩ জন ফিশিং সনদধারী স্কিপার ও ১১২ জন ফিশিং সনদধারী ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। এ বিষয়ে মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আহসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ফিশিং জাহাজে ইতিমধ্যে ৩০-৪০ ভাগ অফিসারের কমতি আছে। মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেটদের সিডিসি প্রদান শুরু হলে ফিশিং জাহাজে তারা চাকরিতে নিরুৎসাহিত হবেন। ফলে সেখানে যোগ্যতাধারী অফিসারের সংকট প্রকট হবে। ফিশিং ট্রলারে ডিপ্লোমাধারীদের চাকরি প্রদানের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে জাহাজ কিনে কেউ নিম্নমানের অফিসার দিয়ে জাহাজ চালাতে চাইবেন না।
তবে লোক সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মাসুক আহমেদ। তিনি বলেন, এখানে কোনো লোক সংকট নেই। বরং ডিপ্লোমা পাস ছেলেদের অল্প বেতনে ফিশিং ট্রলারে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ট্রলার মালিকরা বেশি বেতনে ফিশারিজ ক্যাডেটদের চাকরি দিতে রাজি হচ্ছেন না। অন্যদিকে তারা যদি সিডিসিও না পান তাহলে দু’দিক থেকে বঞ্চিত হবেন।
এ বিষয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর জাকিউর রহমান ভুঁইয়া সমকালকে বলেন, ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেটদের সিডিসি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা নৌ-মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০১২ সালে নৌ-মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুসরণ করে সিডিসি প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। এতে নীতিমালা লঙ্ঘন হবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা ওপরের নির্দেশ পালন করবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
Source: Samakal