search the site
Dr. Sajid Hossain- IMO Maritime Ambassador for Bangladesh
What significance for Bangladeshi seafarers?
Minar Rashid
আমাদের বড় ভাই শ্রদ্ধেয় ডক্টর সাজিদ হোসেন মেরিটাইম এমবেসেডর হিসাবে নিয়োগ পাওয়ায় এই আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চাচ্ছি না । লেখার শুরুতেই তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি ।
তাঁর এই নিয়োগ নিয়ে উক্ত ফোরামে প্রথমেই একটু ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল । এই ফোরামে ব্র্যান্ড এমবেসেডর শব্দটি ব্যবহার করায় অনেকের মনেই একটু খটকা সৃষ্টি হয়েছিল । ব্র্যান্ড এমবেসেডর এর কনসেপ্ট থেকে আইএমওর এই নতুন স্কিম ও গঠণ প্রণালী সম্পূর্ণ ভিন্ন । সেটা পরবর্তিতে একটা চিঠিতে তিনি নিজেই দূর করে দিয়েছেন । সেজন্যেও তাঁকে আবারো ধন্যবাদ ।
মেরিন একাডেমির ঐতিহ্য অনুসারে জুনিয়র সিনিয়রদের মধ্যকার সম্মান ও স্নেহের সম্পর্কটি অটুট থাকলেও আশা করব এই ফোরামটি এক ধরনের গ্যারিসন ফোরাম হয়ে পড়বে না । শুধু কিছু প্রশংসা এবং মৃত্যুর খবরের বাহন না হয়ে সত্যিকার অর্থেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে । আমাদের একাডেমি ও প্রফেশনের ডিগনিটি বজায় রেখেই মুক্ত চিন্তার একটি চমৎকার আবহ সৃষ্টি হবে ।
আই এম ওর ওয়েব সাইটে এই নতুন স্কিমটি সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা রয়েছে । আইএমওর আওতাধীন প্রতিটা দেশ ও সংস্থা একজন করে এমবেসেডর এর নাম ইমেইলের মাধ্যমে প্রস্তাব করলে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি সেই ব্যক্তিকে মেরিটাইম এমবেসেডর হিসাবে ঘোষণা করবেন । এ যাবত তেত্রিশটি দেশ এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মনোনীত হয়ে ( Nominated by Bangladesh ) এভাবেই মেরিটাইম এমবেসেডর হয়েছেন । তার এই পরম সৌভাগ্যের আমরাও ভাগিদার ।
বিশ্বব্যাপী তরুণ যুব সমাজকে এই পেশায় উদ্বুদ্ধু করাই আইএমওর এই স্কিমের মূল লক্ষ্য । কারণ সুখ উপড়ে পড়া উন্নত দেশের যুব সমাজ এই পেশায় আসতে আগ্রহী নহে । মজার বিষয় হলো পরিকল্পনাটি যে সব দেশকে টার্গেট করে গ্রহন করা হয়েছে এ পর্যন্ত এ স্কিমে সাড়া দেয়া তেত্রিশটি দেশের মধ্যে সেই সব পরম ভাগ্যবান দেশের উপস্থিতিই সবচেয়ে কম । বরং আইএমওর হেড কোয়ার্টারে বৃষ্টির ঘোষণা শুনে যে সব দেশ প্রথম ধাপটায় ছাতা মেলে ধরেছে সেসব দেশের অনেক জায়গায় ভিন্ন বাস্তবতা বিরাজ করছে । কোথাও এই বাস্তবতা অত্যন্ত বেদনাদায়ক , মর্ম স্পর্শী।
জানি না এই বাস্তবতাটুকু আমাদের মেরিটাইম এমবেসেডর কতটুকু তুলে ধরতে পারবেন । কারণ তাঁর এই নিয়োগের পর তিনি একটা অন লাইন পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে যে কথা বলেছেন , তা থেকে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না । বাংলাদেশের বাস্তবতা ও কনসার্ন এডিয়ে তিনি আইএমওর বিচ্ছিন্ন ভাবনাটিই তুলে ধরেছেন ।
ব্যাপারটি দাঁড়িয়েছে এইডসের সংক্রমন রোধ করতে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের প্রেসক্রিপশনের অনুরূপ । লরি ও ট্রাক ড্রাইভারদের এইডস সচেতনতা সৃষ্টিতে আমেরিকান এক অভিনেতা WHO র ব্র্যান্ড এমবেসেডর হিসাবে কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন । তিনি স্টেইজে ওঠে অপর ব্র্যান্ড এমবেসেডর শিল্পা শেঠিকে জড়িয়ে ধরে মাঝামাঝি দৈর্ঘের এক চুমু দিয়ে বসেন । অথচ এইডসের মূল কারণ হলো বহুগামিতা , অন্যের বউকে এভাবে নিজের বউ বলে জ্ঞান করা । ইন্ডিয়ার মরাল ব্রিগেইড তাদের লাজ নম্র উৎফুল্ল নায়িকার পানে যে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়েছিল , আইএমওর এই স্কিমটির প্রতিও আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বে একই ধরনের আগ্রহ ও প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে ।
সুপ্রিয় সাজিদ ভাই (স্যার) , মনের ভেতরে অনেক কষ্ট নিয়ে আপনাকে এই কষ্টটি দিচ্ছি । এক সময় আপনাদের দেখে ( আমরা তখন একাডেমির সিনিয়র অথবা জাহাজের ক্যাডেট ) হলিক্রসের মেয়েরা তাদের পছন্দের বর হিসাবে আপনাদের কথা এক নম্বরে উল্লেখ করেছিল । জানি না , আমাদের ভাবিও সেই সার্ভেতে অংশগ্রহন করেছিলেন কি না । হুমায়ূন আহমেদের এক ছ্যাক খাওয়া হিমু আক্ষেপ করে বলেছিল , “এই সব রূপাদের পেতে হলে মেরিনে ডক্টরেট হতে হয় ।” সামাজিক সেই অর্জনটা আজ শেষ হতে চলেছে । আমাদের নিজেদের ছেলেরাই আজ হিমুর চেয়েও করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পড়েছে । এমন সন্ধিক্ষণে আপনার উপর মহান দায়িত্ব পড়েছে এদেশের যুব সমাজের কাছে এই পেশার গুরুত্ব তুলে ধরা । দয়া করে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু ভাবুন , কিছু করুন ।
আজ অফিসিয়ালি মেরিটাইম এমবেসেডর হওয়ার অনেক আগে থেকেই আপনি বোধ হয় এই কাজটি শুরু করেছিলেন । এই পেশাকে প্রমোট করার জন্যে আপনার অনেক সাক্ষাত্কার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে । সেগুলি আপনার মত বিবেকবান ও সংস্কৃতিবান মানুষকে আজ অবশ্যি তাড়া করার কথা । কাজেই বর্তমান এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে উল্টো বাস্তবতা আই এম এর কাছে তুলে ধরুন । তৃতীয় বিশ্বের মত দেশে নিজেদের এই ধরনের চিন্তার বিলাসিতা থেকে আইএমওর মত সংস্হাকে বের হয়ে আসতে পরামর্শ দেন । মেরিন পেশার গুরুত্ব ও মর্যাদা রক্ষার্থে এদেশের মেরিটাইম শিক্ষাকে নিয়ে একটা দুর্গত পরিস্থিতি বা তার কাছাকাছি কিছু ঘোষণা করতে বলুন । দরকার পড়লে এসব বেকার ক্যাডেটদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাময়িক পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নিতে বলুন । সরকার থেকে বিশেষ স্কলারশিপ বা ঋণের আওতায় এদেরকে পুনর্বাসনের চিন্তা করুন । এক্ষেত্রে Doing nothing will be dangerous .
অন্যথায় আমাদের এই ধরনের সুখের খবরের নির্যাসটুকু উপভোগ করা এই ফোরামের অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না ।
-মিনার রশীদ