শিক্ষার্থী পাচ্ছে না মেরিন একাডেমি!

Comments Off on শিক্ষার্থী পাচ্ছে না মেরিন একাডেমি!

marine-academy

সমুদ্রগামী জাহাজে উচ্চ বেতনের চাকরি আর বিশ্ব দেখার হাতছানি টানতে পারছে না শিক্ষার্থীদের। আসনসংখ্যা প্রায় ৭৫ ভাগ কমিয়েও পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পায়নি দেশের একমাত্র সরকারি মেরিন একাডেমি। আর বেসরকারি ১২টি একাডেমির মধ্যে ১০টিই বন্ধ রেখেছে ভর্তি কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জাহাজে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে মেরিন একাডেমিগুলোতে শিক্ষার্থীর সংকট দেখা দিয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলোর ৭৫২ জন শিক্ষার্থী দুই বছরের তত্ত্বীয় প্রশিক্ষণ শেষ করে দু-তিন বছর ধরে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ বা জাহাজে যোগদানের সুযোগ পাননি।

নৌ-শিক্ষা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষার আগে বেসরকারি মেরিটাইম একাডেমিতে যাঁরা প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, তাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। জাহাজে যোগদান করতে না পারা ক্যাডেটরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই খাতের দুরবস্থার কথা বর্ণনা করে প্রচারপত্রও বিলি করেছেন। এ নিয়ে প্রচারণা চলেছে ফেসবুকেও এসব কারণেও নৌ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, দুই বছরের তত্ত্বীয় কোর্স শেষ করে এক বছর সমুদ্রগামী জাহাজে প্রশিক্ষণ নিতে হয় ক্যাডেটদের। এরপর ক্যাডেটরা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে পরীক্ষা দিয়ে কর্মকর্তা হিসেবে জাহাজে মূল কর্মজীবন শুরু করতে পারেন।

সরকারি-বেসরকারি একাডেমির শিক্ষা কার্যক্রম তদারককারী সংস্থা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর জাকিউর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাডেটদের জাহাজে যোগদান করতে না পারাই শিক্ষার্থী না পাওয়ার মূল কারণ। আমরাও সতর্ক করেছি, বেসরকারি একাডেমিতে ১১-১২ লাখ টাকা খরচ করে কারও শিক্ষাজীবন যাতে মাঝপথে বন্ধ হয়ে না যায়।’ তিনি বলেন, ক্যাডেটদের জাহাজে প্রশিক্ষণের জন্য মূল ভরসা দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ। কিন্তু বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও বেসরকারি খাতে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা এখন কম।
সরকারি মেরিন একাডেমি সূত্র জানায়, সদ্য বের হওয়া ৫০তম ব্যাচে ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষার্থী সংকটের বিষয় বিবেচনা করে এবার ৮০টি আসনে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় মেরিন একাডেমি। তবে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৫২ জন।
এ বিষয়ে জানতে মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাজিদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সরকারি একাডেমি কিছু শিক্ষার্থী পেলেও বেশির ভাগ বেসরকারি মেরিন একাডেমি ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ক্যাডেট কোর্স পরিচালনাকারী ১২টি একাডেমির মধ্যে মাত্র দুটি একাডেমি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এই দুটি একাডেমির মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি এবার আসনসংখ্যা কমিয়েছে। একাডেমির কমান্ড্যান্ট ক্যাপ্টেন জাকি আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজ ব্যবসায় মন্দার কারণে এবার আসনসংখ্যা ৭৬ থেকে কমিয়ে ৬০টি নির্ধারণ করেছি।’
অন্যদিকে ঢাকার ক্যামব্রিজ মেরিটাইম কলেজও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কলেজের পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিদেশি জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করায় দুই বছর বিরতির পর এবার নতুন করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছি।’
শিক্ষার্থীদের সাড়া না পেয়ে বেসরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এবার ভর্তি কার্যক্রম থেকে বিরত আছে। বেসরকারি ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমির ডেপুটি কমান্ড্যান্ট ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘এবার ভর্তি কার্যক্রম থেকে বিরত থেকেছি আমরা। অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী না পেলে একটি ব্যাচ শুরু করা যায় না।’

Source: Prothom Alo

Comments are closed.