search the site
হুমকির মুখে নাবিকদের ভবিষ্যৎ
থেমে নেই ক্যাডেট ও নাবিকদের অত্যাবশ্যকীয় কনটিনিওয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট (সিডিসি) জালিয়াত চক্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই চক্রটি বিদেশে নাবিক পাঠাচ্ছে। সিডিসি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সময় জাল সন্দেহে সম্প্রতি ১০টি সিডিসি আটক করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ।
এসব সিডিসি চট্টগ্রাম শিপিং অফিস থেকে ইস্যু করা হয়েছে কিনা তা জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার চিঠি দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখা। সেখানে দেওয়া নামধারীদের সিডিসি নম্বর মিলিয়ে দেখার পর জাল বলে প্রমাণিত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার বিকেলে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ফ্যাক্সের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফ্যাক্স বার্তায় ওই ১০ ব্যক্তির ইমিগ্রেশন ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা শিপিং অফিসকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিডিসি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া এবং শাস্তির বিধান না থাকায় এ ধরনের জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে না। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু কমকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতিও এর জন্য দায়ী।
গত বছরের ২১ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। ওই জিডির বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সিডিসিগুলো চট্টগ্রাম শিপিং অফিস থেকে ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে একটি মতামত চাওয়া হয়।
ফ্যাক্স যোগে পাঠানো চিঠিটি বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিপিং অফিস গ্রহণ করে এবং এক ঘণ্টার মধ্যে তথ্য যাচাই করে সিডিসিগুলো জাল উল্লেখ করে ফিরতি ফ্যাক্স পাঠানো হয়।
যাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে তারা হলেন-আনোয়ার হোসেন (সিডিসি নম্বর টি/৩৬৫৭৩)। মোহাম্মদ কামরুল হাসান শাওন (সি/৩৭১৩০), রাকিব হাসান রিয়াজ (সি/৩৭২৪২), জয়নুল আবেদিন (সি/৩৮২২০), ওমর ফারুক (সি/০১৬৪১৮), শফিকুর রহমান (টি/৩৬৬০২), ইমরান হাসান (সি/৩৮১৮২), ফয়সাল আমীন (টি/৩৮৫৩৪), মোহাম্মদ রুবেল (ই/৩৭৬৪৫) ও মোহাম্মদ হিমু (ডি/৩৫৭৫৫)।
শিপিং মাস্টার ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম বাংলানিউজকে বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ফ্যাক্স পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা সিডিসিধারীদের নাম ও সিডিসি নম্বর যাচাই-বাছাই করি। সেখানে সিডিসিগুলো জাল প্রমাণিত হয়।
জাল সিডিসির মাধ্যমে যেসব প্রতিষ্ঠান ওই ১০ জনকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছে সেগুলোর নাম ও ঠিকানা জানাতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাণিজ্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর (সংশোধিত-১৯৮৮), ধারা ৯৪ মোতাবেক সিডিসি জালিয়াতির জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।
সিডিসি জালকারীরা দেশের শত্রু উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়।
বাংলাদেশি বৈধ নাবিক ও কর্মকর্তাদের ছবিসহ সিডিসির যাবতীয় তথ্য এবং অনুমোদিত মেনিং এজেন্টদের তালিকা শিপিং অফিসের ওয়েবসাইটে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সিডিসির সত্যতা সহজেই জানা সম্ভব।
এদিকে জাল সিডিসি নিয়ে জাহাজে উঠে অদক্ষ নাবিক হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির সংকট হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব কারণে মেরিন একাডেমি থেকে পাস করেও যোগ্য নাবিকরা চাকরি পাচ্ছেন না অভিযোগ এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, শাস্তির বিধান না থাকায় জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তাই শাস্তির বিধান রেখে সিডিসি জালিয়াতি বন্ধে আইন প্রণয়ন জরুরি।
জাল সিডিসি নিয়ে বিদেশে গেলেও চাকরি করতে পারত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অনলাইনে যাচাই করলে ধরা পড়ে পড়ত। এতে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হতো।
বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির জন্য মেরিন একাডেমি ও ক্রু (নাবিক) হিসেবে যোগ দিতে হলে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (এনএমআই) ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করতে হয়। এরপর শিপিং অফিস থেকে সিডিসি নিতে হয়। মেরিন একাডেমি ও এনএমআই থেকে পাস করলেও সিডিসি ছাড়া কোনো জাহাজে চাকরি হয় না। তাই জাহাজে চাকরির ক্ষেত্রে সিডিসিই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর এই সুযোগে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে জাল সিডিসি বানিয়ে অদক্ষ লোকদের জাহাজে তুলে দিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ায় বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
জাল সিডিসি তৈরির সঙ্গে নাবিক ও প্রবাসী কল্যাণ পরিদপ্তরের একজন কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। কিন্তু এরপরও এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দফতরের পরিচালক মো. নুরুল আলম নিজামী।
সাবেক শিপিং মাস্টার মো. শামিম আহমেদও জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি ওই দপ্তরের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এসব কারণেই মূলত জালিয়াত চক্রটি এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা।
Source: First-BD.Net