search the site
Marine job market is shrinking
চাকরিবাজার সংকুচিত হচ্ছে বাংলাদেশি নাবিকদের
আহমদ সেলিম রেজা
দুটি সরকারি মেরিন ইনস্টিটিউট ছাড়াও মেরিন সেক্টরে এখন বেসরকারি ১৮টি মেরিন একাডেমি রয়েছে। নাবিক প্রশিক্ষণের জন্যও সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিচ্ছে। একের পর এক এসব প্রাইভেট একাডেমির অনুমোদন দেওয়ার ফলে দেশে বাড়ছে বেকার নাবিক ও মেরিন ক্যাডেটের সংখ্যা। সরকারি পরিসংখ্যান মতে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গত ৩ বছরে ১ হাজার ১০৪ জন ক্যাডেট পাস করেছেন। এর মধ্যে চাকরি পেয়েছেন ৭৪৮ জন। বেসরকারি ১৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ৮০০ ক্যাডেট বের হন। এর মধ্যে দেশীয় জাহাজে চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন ১৬০ থেকে ১৭০ জন। প্রতি বছরে বেকার থাকছেন ৬৩০ থেকে ৬৪০ জন। অন্যদিকে বিদেশের চাকরি বাজারে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের ইমেজ সন্তোষজনক না হওয়ায় বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরিবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারিভাবেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত একটি সরকারি প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের ইমেজ সন্তোষজনক না হওয়ায় বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরিবাজার সংকুচিত হচ্ছে। কীভাবে বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি এবং ক্যাডেটদের চাকরিবাজার সৃষ্টি করা যায় সে বিষয়ে কমিটিতে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। সে প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিদেশি জাহাজে চাকরি প্রদানে শিপম্যানিং এজেন্টদের জালিয়াতি, বাংলাদেশি নাবিকদের সনদ জালিয়াতি, বিদেশি বিভিন্ন জাহাজ হতে নাবিক ও শ্রমিকদের পলায়ন, বাংলাদেশি নাবিকদের প্রশিক্ষণের মান ও কর্মদক্ষতার অভাবের কারণে বিদেশি জাহাজ মালিকদের নিয়োগ অনীহা, আন্তর্জাতিক নৌ-রুটে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সিডিসি ইস্যু করার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই না করা, জালিয়াতির জন্য শিপম্যানিং এজেন্ট ও নাবিকদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অভাব। সাবেক একজন নাবিক জানান, শিপম্যানিং এজন্টদের বেসরকারি রেটিংস দেওয়ার অনুমোদন দেওয়ায় চাকরির বাজারে ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সামনে এটি আরও বাড়বে। সরকারি বিবরণী থেকে জানা যায়, গত ৩ বছরে রেটিংস প্রশিক্ষণে পাস করেছে ৭ হাজার ১১ জন। এর মধ্যে চাকরি পেয়েছে মাত্র ৪০৩ জন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেরিন একাডেমি থেকে এক বছর ও দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করে বের হন ক্যাডেটরা। এ জন্য খরচ হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। তারা জাহাজের ক্যাপ্টেন, প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ক্রুরা বের হন ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ করে। তারা জাহাজের ক্রু হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি মেরিন একাডেমির সংখ্যা ২০টি। সরকারি মেরিন ইনস্টিটিউট ও একাডেমির অবস্থান চট্টগ্রামে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চারটি বেসরকারি মেরিন একাডেমিও রয়েছে। বাকি ১৪টি মেরিন একাডেমি ঢাকায়। সরকারি মেরিন একাডেমি থেকে বছরে বের হয় ২৮৬ ক্যাডেট। বেসরকারি মেরিন একাডেমি থেকে বছরে বের হয় আরও প্রায় ১ হাজার ক্যাডেট। চাকরির বাজার নিশ্চিত না হলেও গণহারে চলছে মেরিন একাডেমির পাশাপাশি এখন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বিদেশি ডিগ্রি দেওয়ার নামে বেশ ঘটা করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। তবে জাহাজে চাকরি করার জন্য বা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে কোনো বিদেশি ডিগ্রির দরকার পড়ে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসএসসি পাস করেই ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। ৩ থেকে ৬ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ক্রুরা সি ফেয়ারার আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট (এসআইডি) পায়। এই ডকুমেন্টবলেই দেশি বা বিদেশি জাহাজে তাদের চাকরি হয়। ন্যাশনাল মেরটাইম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম সংসদীয় কমিটিকে জানান, ন্যাশনাল মেরটাইম ইনস্টিটিউটে এসএসসি পাস ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে প্রি-সি ও পোস্ট-সি নামের দুটি কোর্স করানো হয়। গত ২০ বছরে এখান থেকে ২ হাজার ৩১৮ জন প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩৯ জন চাকরি পেয়েছেন। এরা অফিসার হিসেবে নয়, কর্মচারী পর্যায়ে জাহাজে চাকরি করে থাকে। এ সময় তিনি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কথা কমিটিকে অবহিত করেন। জানা যায়, বাঙালি নাবিকদের বিদেশের অধিকাংশ দেশে সোর লিভ দেওয়া হয় না। সোর লিভ মানে বিদেশের মাটিতে ভ্রমণের অনুমতি। মুসলমান হিসেবে সন্ত্রাসবাদের বদনামের কারণে দুবাইতেও এ ভ্রমণের অনুমতি পায় না বাংলাদেশের নাবিকরা, জানালেন বাংলাদেশি নাবিক ইয়াসিন আহমেদ। তিনি জানান, ভারতেও আমাদের সোর লিভ নেই। ফলে অনেকে বিনা অনুমতিতে শহরে ঢুকে আটক হন। এতে বাংলাদেশের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়। এসব কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাঙালি নাবিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠকে আলোচিত এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মেরিন ক্যাডেটরা আগে ইউরোপীয় জাহাজে চাকরি পেত না। এখন পাচ্ছে। তারপরও কোনো কারণে যাতে এ সুযোগ নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি ফিমেল ক্যাডেটসহ মেরিন ক্যাডেটদের জন্য চাকরির বাজার সৃষ্টি করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ক্যাডেটদের সংখ্যা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ডেন্ট (চলতি দায়িত্ব) ড. সাজিদ হোসেন সংসদীয় কমিটিকে জানান, সরকারের পাঁচ বছরে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৭০ হাজার ক্যাডেট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি মেজর অব রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মেরিন একাডেমিতে ভর্তি ও প্রশিক্ষণের আহ্বান জানান। কারণ বাংলাদেশের জাহাজ বহর ছোট। মাত্র ৭৩টি সমুদ্রগামী জাহাজ বিদেশে যাতায়াত করে। ফলে বিদেশি চাকরি বাজারকে সামনে রেখেই দক্ষ নাবিক ও ক্রু তৈরি করতে হবে।
Source: Bangladesh Protidin