The Bangladesh Academy Cadets not getting jobs due to Visa problems

Comments Off on The Bangladesh Academy Cadets not getting jobs due to Visa problems

ভিসা সমস্যায় চাকরি পাচ্ছেন না বাংলাদেশি মেরিনরা

শামীম হামিদ

visa-problem

এক সময় তরুণ-যুবকদের কাছে লোভনীয় পেশা হিসেবে সমাদৃত ছিল সমুদ্রগামী জাহাজের প্রকৌশলী ও নাবিকের চাকরি। তবে নানাবিধ জটিলতা, দুর্নীতির কারণে সম্ভাবনাময় এই চাকরির বাজারটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ভিসা সমস্যার জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলোতে চাকরি পাচ্ছেন না বাংলাদেশি মেরিনাররা। অন্যান্য দেশের মেরিনাররা বিদেশে গিয়ে ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ অথবা ‘ওকে টু বোর্ড’ সুবিধা পেলেও বাংলাদেশি মেরিনাররা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তার ওপর কিছু অসাধু এজেন্সি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে অদক্ষ নাবিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়ায় বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি নাবিক নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে বিদেশি জাহাজে চাকরি করা দূরের কথা, বাংলাদেশের নাবিক শুনলেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে ‘এসআইডি’ সনদ দেয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে ‘এনওসি’। এই এনওসি জাল করা খুবই সহজ। জাল এনওসি ব্যবহার করে অতি সহজেই ইমিগ্রেশন পার হয়ে যাচ্ছেন ভুয়া সনদধারী নাবিকরা। কোনো কোনো এজেন্সি আবার ভুয়া নাবিকদের সনদ দিয়ে জাহাজে নিয়োগের মাধ্যমে বিদেশে মানুষ পাচার করছে। কিছু কিছু কোম্পানি এবং এজেন্সি তাদের জাহাজের অফিসার ও ক্রুদের বেতন মাসের পর মাস বকেয়া রাখছে। মেরিনাররা কোথাও এসব বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন না।

একদিকে যখন মেরিনারদের চাকরির বাজারে তীব্র সংকট চলছে, তখন দেশে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অনেকগুলো প্রাইভেট একাডেমির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রাইভেট মেরিন একাডেমির সংখ্যা ১৭টি। এছাড়া আরো ৬টি সরকারি মেরিন একাডেমি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অভিযোগ শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে বেসরকারি একাডেমিগুলোতে ক্যাডটে ভর্তি করা হলেও দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে না। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্য ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে প্রতারিত হচ্ছেন।

বর্তমানে দেশে প্রায় ৬ শতাধিক ক্যাডেট ও ৪ শতাধিক জুনিয়র অফিসার বেকার। এ বছর আরো বিভিন্ন একাডেমি থেকে পাস-আউট হবে আরো ১১০০ ক্যাডেট। এ বছর সর্বমোট ১৬০০ ক্যাডেট তাদের পেশাগত জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ১২ মাস মেয়াদি ‘সি-টাইম’ এর জন্য লড়বেন। অথচ দেশীয় ৩৮টি জাহাজে সর্বোচ্চ ১৫০ জনের সি-টাইম করা সম্ভব। অবশিষ্ট বিপুলসংখ্যক ক্যাডেটের চাকরি জীবন অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।

দেশের সরকারি, বেসরকারি ১৮টি মেরিন একাডেমি থেকে প্রতিবছর এক হাজার ক্যাডেট পাস করে বের হন। কিন্তু শিক্ষাজীবন কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করলেও তাদের অধিকাংশেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। মেরিন একাডেমির সংখ্যা বাড়লেও পাল্লা দিয়ে কমছে দেশীয় জাহাজের সংখ্যা এবং বিদেশি জাহাজে চাকরির সুযোগ। দুই বছর আগেও দেশীয় জাহাজের সংখ্যা ছিল ৭০টি। বর্তমানে তা ৩৮টিতে নেমে এসেছে।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ক্যাডেটরা মেরিটাইম সেক্টরের নানাবিধ সংকট ও দুর্নীতি দূর করার দাবি জানান। তারা মেরিনারদের বিদেশি জাহাজে চাকরির সুযোগ করে দিতে ভিসা সমস্যা দূর করার দাবি জানান। প্রাথমিকভাবে তারা অন্ততপক্ষে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা প্রাপ্তির উদ্যোগ নেয়ার এবং বিশ্বের যে কোনো বন্দর থেকে জাহাজে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, বেকার ক্যাডেটদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত মেরিন একাডেমিতে ক্যাডেট সংখ্যা কমিয়ে ৫০ করা, ক্যাডেটদের চাকরির জন্য নিজস্ব এজেন্সি স্থাপন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্যাডেটদের চাকরি দিতে ব্যর্থ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল, জাল সিডিসি ও সিওসি সনদের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করার পাশাপাশি দায়ী এজেন্সির অনুমোদন বাতিল করা, জাল সনদে নিয়োগরোধে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব সনদ যাচাইয়ের জন্য আলাদা বুথ স্থাপন এবং মেশিন রিডেবল সিডিসি চালু করা ও অনলাইন ভেরিফিকেশন শতভাগ আপডেট রাখা, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে এসআইডি ছাড়া অন্য কোন ধরনের অনাপত্তিপত্র দেয়া থেকে বিরত থাকা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মো. আনাম চৌধুরী, মো. সাখাওয়াত হোসেন, একেএম শহিদুল্লাহ ও জাহেদুল আলম।

Comments are closed.