জাল সিডিসিধারী নাবিকদের প্রত্যয়নের জন্য জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা

1 comment
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ
সমুদ্র পরিবহণ অধিদফতরের অঙ্গ সংস্থা শিপিং অফিসে দীর্ঘদিন যাবত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট বা ধারাবাহিক অব্যাহতিপত্র (সিডিসি) ইস্যুতে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও জাল সিডিসি প্রদানসহ সীমাহীন অনিয়মের নানা ঘটনা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। আর এই অভিযোগের তীর সংস্থা-প্রধান তথা বর্তমান শিপিং মাস্টারের দিকেই। অথচ এ বিষয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের জন্য নাবিকদের শিপিং অফিস থেকে প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গত তিন বছর যাবত বৈধ সিডিসিধারীদের পাশাপাশি জাল সিডিসিধারীদেরও এই প্রত্যয়নপত্র দেয়া হচ্ছে। তবে বৈধদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা নেয়া হলেও জাল সিডিসিধারীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা। এছাড়া বিদেশি সিডিসিধারী বৈধ নাবিকদের নামে বাংলাদেশি সিডিসি ইস্যু করাতে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। বর্তমান শিপিং মাস্টার ও সমুদ্র পরিবহণ অধিদফতরের সাবেক পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামীমের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে গত তিন বছরে জাল সিডিসিধারী দু’শতাধিক নাবিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আর একই সময়ে বিদেশি সিডিসিধারী শতাধিক নাবিক জনপ্রতি ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি সিডিসি নিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন নাবিক চাঞ্চল্যকর এ তথ্য দিয়েছেন।

সূত্র আরো জানায়, সমুদ্রগামী জাহাজে যাওয়ার জন্য (কর্মে যোগদান) শিপিং অফিস থেকে মেরিন ক্যাডেট ও মেরিন অফিসারদের ‘ভয়েজ এন্ডোর্সমেন্ট’ করাতে হয়। গত দু’বছরে ক্যাডেট ও অফিসার মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জনের এন্ডোর্সমেন্ট করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৭-৮ জন অভিযোগ করেছেন, জাহাজে মোটা বেতনে চাকরির স্বার্থে এ কাজের জন্য তারা প্রত্যেকেই শিপিং মাস্টারকে ২ লাখ টাকা করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিপিং অফিসের এ ধরনের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সমুদ্র পরিবহণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও নিজেদের স্বার্থে মহাপরিচালকের কাছে তা গোপন রেখেছেন। কারণ, অভিযুক্ত শিপিং মাস্টারের মাধ্যমে তারাও জাল সিডিসিধারীদের প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করিয়ে থাকেন। এছাড়া ঐসব কর্মকর্তা মহাপরিচালকের আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি তাদের কথাই বিশ্বাস করে থাকেন বলে সূত্র জানায়।

তবে গুরুতর এসব অভিযোগের বিষয়ে সমুদ্র পরিবহণ অধিদফতর রহস্যজনকভাবে নীরব থাকলেও বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণার পরও প্রাক্তন শিপিং মাস্টারকে স্বপদে বহাল করা হচ্ছে না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল সাবেক শিপিং মাস্টার আলী আম্বিয়ার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণার দীর্ঘ ৯ মাস পরও কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি তিনি। গত বছরের ২৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাকে নির্দোষ এবং অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্তৃক বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। কিন্তু তাকে যোগদানের সুযোগ না দিয়ে বর্তমান শিপিং মাস্টারের দ্বারা প্রভাবিত অধিদফতরের বিতর্কিত প্রসিকিউটিং অফিসারের মতামতের ভিত্তিতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এবং তার (আলী আম্বিয়া) বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, শিপিং মাস্টার আলী আম্বিয়ার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত বছরের ২৩ নভেম্বর সংসদীয় কমিটির এক পত্রে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলা হয়, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা অহেতুক রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও অধিদফতর আপিল প্রত্যাহার কিংবা আলী আম্বিয়াকে স্বপদে পুনর্বহাল করেনি।

Source: Daily Janata
  1. kajerpola says:

    oi ambia o to arek chore….