search the site
Corruption in the maritime sector
মেরিটাইম খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি
কামরান সিদ্দিকী
এক সময়ের ‘রাজকীয় পেশা’ হিসেবে খ্যাত সমুদ্রগামী জাহাজে প্রকৌশলী ও নাবিক হিসেবে যাওয়ার সম্ভাবনাময় খাতটি এখন ধ্বংসের মুখে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রাইভেট মেরিন একাডেমির অনুমতি দেওয়ায় এ খাতে বেকারত্বের হার আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে। ভিসা জটিলতা, জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়াসহ প্রভৃতি কারণে অনেক দেশ বাংলাদেশি নাবিক নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় হুমকিতে পড়েছে বছরে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রেমিট্যান্স।
২ বছরে ১৩ একাডেমি : ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ৫টি মেরিন একাডেমি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাকি ১৩টি প্রাইভেট একাডেমি অনুমোদন দেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক কমডোর জোবায়ের আহমেদ। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাষ্যমতে, ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো এসব একাডেমির অনুমতির ক্ষেত্রে তার মন্ত্রণালয় ছিল ঘোর অন্ধকারে।
মাত্র ২ বছরে ১৩টি প্রাইভেট একাডেমি অনুমতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন একাডেমির অনুমোদনে বিশাল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের কথাও শোনা যায়। তৎকালীন ডিজির একান্ত কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ‘ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ এস এম নাজমুল
হক এসব একাডেমির অনুমোদনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। ৪টি একাডেমির মালিকানায় স্বয়ং তিনি নিজেও রয়েছেন। এগুলো হলো_ এশিয়ান মেরিটাইম একাডেমি, প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমি, ওশান মেরিটাইম ও আটলান্টিক মেরিটাইম একাডেমি।
বিভিন্ন অভিযোগে মেয়াদপূর্তির কয়েক মাস আগেই কমডোর জোবায়েরকে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অগোচরে এতগুলো একাডেমি অনুমোদন দেওয়া নিয়ে গঠিত হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি। বর্তমানে কমডোর জোবায়ের ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে’র সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে কর্মরত।
কমডোর জোবায়ের আহমেদ সমকালকে বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক চাহিদার আলোকে বেশি মেরিনার তৈরির জন্য প্রাইভেট একাডেমির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদি কোনো একাডেমি শর্ত ভঙ্গ করে পরিচালিত হয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া একাডেমি অনুমোদনের বিষয়ে কিছু না বললেও এক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এস এম নাজমুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কাডেট বৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে :’এক্স-ক্যাডেটস অব বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি’র দেওয়া তথ্যমতে, একমাত্র সরকারি মেরিন একাডেমিসহ ১৯টি একাডেমি থেকে প্রতি বছর পাস-আউট হচ্ছে প্রায় ১ হাজার জন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০১৫ সালে প্রায় ১ হাজার ৬শ’ ক্যাডেট তাদের পেশাগত ‘সি টাইমে’র (একাডেমি-পরবর্তী ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) জন্য লড়বে। অথচ ৩৮টি দেশীয় জাহাজে মাত্র ১২০ জনের ‘সি টাইম’ করা সম্ভব।
নীতিমালা মানছে না একাডেমিগুলো :সম্প্রতি ঢাকার মগবাজার ও তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত দুটি প্রাইভেট একাডেমিতে একজন ছাত্র ভর্তি করানোর বিষয়ে এ প্রতিবেদক সরেজমিন কথা বলতে যান। দুটি একাডেমি থেকেই তাদের কর্মকর্তা কোর্স পরবর্তী ‘সি-টাইম’ ও চাকরির পূর্ণ নিশ্চয়তা দেন। প্রয়োজনে লিখিত চুক্তির কথাও বলেন। এ চিত্র বেশিরভাগ প্রাইভেট একাডেমির বলে অভিযোগ করেছেন চাকরি না পাওয়া অনেক ক্যাডেট। এসব একাডেমি ১০০ ভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে ক্যাডেট ভর্তি করলেও দু-একটি ছাড়া কেউ তা পূরণ করতে পারছে না । ফলে অনেক সাধারণ অভিভাবক সন্তানের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রতারিত হচ্ছেন।
হুমকিতে হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স :বিদেশি জাহাজে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অফিসার ও সাড়ে ৩ হাজার ক্রু কর্মরত রয়েছেন। বছরে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সনদ জালিয়াতি, জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়া, সমুদ্র জীবনে অভ্যস্ত হতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশ থেকে মেরিনার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হংকং ও মালয়েশিয়া আগে অন অ্যারাইভাল ভিসা দিলেও বর্তমানে তা দিচ্ছে না। তা ছাড়া ভারতসহ কয়েকটি দেশ ভিসা দিতে গড়িমসি করে। এসব দেশে চাকরির দরজা বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আদায়কারী এ খাত।
বিভিন্ন দেশের মেরিনারদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ওকে টু বোর্ডের সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশি মেরিনাররা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিছু অসাধু ম্যানিং এজেন্সি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে অদক্ষ নাবিক নিয়োগ দিচ্ছে। এসব সনদ জাল হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে অহরহ।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সমকালকে বলেন, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে ১৩টি প্রাইভেট একাডেমির অনুমতি দিয়েছিলেন। নানা অনিয়মের জন্য মেয়াদপূর্তির আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেসব একাডেমি নীতিমালা মেনে চলছে না, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তৎকালীন ডিজির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম জাকিউর রহমান ভূইয়া ভিসা জটিলতার বিষয়ে সমকালকে বলেন, জাল ঠেকাতে মেশিন রিডেবল ‘সিডিসি’ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভিসা বন্ধ হওয়া দেশগুলোতে আবার ভিসা চালুর চেষ্টা চলছে।
মাত্র ২ বছরে ১৩টি প্রাইভেট একাডেমি অনুমতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন একাডেমির অনুমোদনে বিশাল অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের কথাও শোনা যায়। তৎকালীন ডিজির একান্ত কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের ‘ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার’ এস এম নাজমুল
হক এসব একাডেমির অনুমোদনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। ৪টি একাডেমির মালিকানায় স্বয়ং তিনি নিজেও রয়েছেন। এগুলো হলো_ এশিয়ান মেরিটাইম একাডেমি, প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমি, ওশান মেরিটাইম ও আটলান্টিক মেরিটাইম একাডেমি।
বিভিন্ন অভিযোগে মেয়াদপূর্তির কয়েক মাস আগেই কমডোর জোবায়েরকে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অগোচরে এতগুলো একাডেমি অনুমোদন দেওয়া নিয়ে গঠিত হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি। বর্তমানে কমডোর জোবায়ের ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে’র সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে কর্মরত।
কমডোর জোবায়ের আহমেদ সমকালকে বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক চাহিদার আলোকে বেশি মেরিনার তৈরির জন্য প্রাইভেট একাডেমির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদি কোনো একাডেমি শর্ত ভঙ্গ করে পরিচালিত হয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া একাডেমি অনুমোদনের বিষয়ে কিছু না বললেও এক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এস এম নাজমুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
কাডেট বৃদ্ধি জ্যামিতিক হারে :’এক্স-ক্যাডেটস অব বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি’র দেওয়া তথ্যমতে, একমাত্র সরকারি মেরিন একাডেমিসহ ১৯টি একাডেমি থেকে প্রতি বছর পাস-আউট হচ্ছে প্রায় ১ হাজার জন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০১৫ সালে প্রায় ১ হাজার ৬শ’ ক্যাডেট তাদের পেশাগত ‘সি টাইমে’র (একাডেমি-পরবর্তী ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ) জন্য লড়বে। অথচ ৩৮টি দেশীয় জাহাজে মাত্র ১২০ জনের ‘সি টাইম’ করা সম্ভব।
নীতিমালা মানছে না একাডেমিগুলো :সম্প্রতি ঢাকার মগবাজার ও তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত দুটি প্রাইভেট একাডেমিতে একজন ছাত্র ভর্তি করানোর বিষয়ে এ প্রতিবেদক সরেজমিন কথা বলতে যান। দুটি একাডেমি থেকেই তাদের কর্মকর্তা কোর্স পরবর্তী ‘সি-টাইম’ ও চাকরির পূর্ণ নিশ্চয়তা দেন। প্রয়োজনে লিখিত চুক্তির কথাও বলেন। এ চিত্র বেশিরভাগ প্রাইভেট একাডেমির বলে অভিযোগ করেছেন চাকরি না পাওয়া অনেক ক্যাডেট। এসব একাডেমি ১০০ ভাগ চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে ক্যাডেট ভর্তি করলেও দু-একটি ছাড়া কেউ তা পূরণ করতে পারছে না । ফলে অনেক সাধারণ অভিভাবক সন্তানের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে প্রতারিত হচ্ছেন।
হুমকিতে হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স :বিদেশি জাহাজে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অফিসার ও সাড়ে ৩ হাজার ক্রু কর্মরত রয়েছেন। বছরে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সনদ জালিয়াতি, জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়া, সমুদ্র জীবনে অভ্যস্ত হতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশ থেকে মেরিনার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হংকং ও মালয়েশিয়া আগে অন অ্যারাইভাল ভিসা দিলেও বর্তমানে তা দিচ্ছে না। তা ছাড়া ভারতসহ কয়েকটি দেশ ভিসা দিতে গড়িমসি করে। এসব দেশে চাকরির দরজা বন্ধ হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আদায়কারী এ খাত।
বিভিন্ন দেশের মেরিনারদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ওকে টু বোর্ডের সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশি মেরিনাররা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিছু অসাধু ম্যানিং এজেন্সি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে অদক্ষ নাবিক নিয়োগ দিচ্ছে। এসব সনদ জাল হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে অহরহ।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য : নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সমকালকে বলেন, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে ১৩টি প্রাইভেট একাডেমির অনুমতি দিয়েছিলেন। নানা অনিয়মের জন্য মেয়াদপূর্তির আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেসব একাডেমি নীতিমালা মেনে চলছে না, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তৎকালীন ডিজির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম জাকিউর রহমান ভূইয়া ভিসা জটিলতার বিষয়ে সমকালকে বলেন, জাল ঠেকাতে মেশিন রিডেবল ‘সিডিসি’ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভিসা বন্ধ হওয়া দেশগুলোতে আবার ভিসা চালুর চেষ্টা চলছে।
Source: Samakal