How a golden goose named “Marine Academy” was slaughtered

Comments Off on How a golden goose named “Marine Academy” was slaughtered

Minar Rashid

মেরিন নামক সোনার হাঁসটিকে যেভাবে জবাই করা হচ্ছে

রাষ্ট্রীয় ভাবেই আমরা এক ধরনের প্রতারক চরিত্র ধারণ করে ফেলেছি। এই ডিজিটাল যুগেও এনালগ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের মহা সচিব বানকি মুনকে দুই বার এবং ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনকে কম পক্ষে একবার বিক্রি করার চেষ্টা করেছি।
তারা যা বলেন নি সেই কথা তাদের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি অথবা ফটো সেশনকে বৈঠক হিসাবে চালানোর কোশেশ করেছি। বেচারারা বিক্রি হয়ে পড়ছেন এটা অনুমান করে স্বয়ং তাদের দফতর থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ।

ঘেন্না-পিত্তি-লজ্জা-শরমের ট্রেসহোল্ড লিমিট ভ্যালূ আমাদের এত বেড়ে গেছে যে এমনভাবে রাম ধরা খাওয়ার পড়েও আমাদের কিছুই হয় নি।
এই ধরনের নির্লজ্জ প্রতারনা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পর্যায়ে এই ধরনের বিক্রি অহরহ ঘটছে ।
ক্যামেরুন বা বানকি মুনেরা বিক্রি হওয়া টের পেলে আওয়াজ তুলে। আমরা টের পেলেও কিছু করি না। তবে দুয়েক জন আওয়াজ তুলতে চান। এমন মহৎ উদ্দেশ্যে আমাদের এক সিনিয়র ভাই মেরিন একাডেমিকে বিক্রি করার একটি সংবাদের প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট করেছেন। মেরিন নামক সোনার ডিম পাড়া হাঁসটি কীভাবে জবাই হচ্ছে তারই বেশ কয়েকটি নমুনা বা স্যাম্পল পাঠিয়েছেন।
এরকম একটি স্যাম্পলের শিরোনাম ” সব দেশ টপকে সেরা বাংলার লিসান ” । একটি বাংলা নিউজ পোর্টাল প্রতিবেদনটি ছািপয়েছে।
সেই প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটি লাইনের প্রতি মনোযোগ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে –
” মেরিন একাডেমিতে অনেকটাই যেন ভেলকিই দেখিয়ে দিলেন আশরাফুল হক লিসান। স্বপ্ন প্রত্যাশী এই মেধাবী বাংলাদেশি তরুণ ভারত,শ্রীলংকা,নাইজেরিয়া ও ব্রিটিশ ক্যাডেটদের পেছনে ফেলে একাডেমিতে অর্জন করেছেন প্রথম স্থান। “

প্রতিবেদনটি পড়ে বেশ খটকায় পড়ে গেলাম, এখানে আসল ভেলকিটা দেখালো কে ? এই লিসান নাকি তার মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠানটি ?

এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ চতুরতার সাথে আগে কয়েকটি শব্দ বাদ দিয়ে শুধু ‘মেরিন একাডেমি’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। এটি ভুল করে নয়, ইচ্ছে করেই করেছে। যে মেরিন একাডেমির নামটি দেশের ভেতরে ও বাইরে আজ পরিচিতি পেয়েছে সেই নামটিকেই আজ এই ধরনের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা ভাঙিয়ে খাচ্ছেন।

উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত মূল সংবাদটি কতটুকু সঠিক সে ব্যাপারে সাধারন মানুষের কারো পক্ষে খোজ নেয়া সম্ভব নয়। আমার জানা মতে পৃথিবীর কোনও শিপিং কোম্পানীতে এই উপমহাদেশের কোন শিক্ষানবীশ অফিসারকে লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয় না। একজন ক্যাডেটের স্বাভাবিক বেতন দুই শ ডলার থেকে চার শ ডলারের মধ্যে। টাকায় ষোল হাজার থেকে বত্রিশ হাজার।
কাজেই পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে এই পেশা সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান আছে তারা উচ্চারন করবেন, বুলশিট।

অনেকের উৎকন্ঠা, এই ডিগনিফাইড পেশাটিও শেষমেষ আদম বেপারির মতো মেরিন বেপারিদের হাতে পড়ে গেছে। আদম বেপারিরা সবকিছু বাড়িয়ে বলে যেভাবে তাদের শিকার ধরেন, দেখা যাচ্ছে এই মেরিন বেপারিরাও হুবহু তাই করে যাচ্ছেন।

এক লিসানের ছবি ও কথিত সফলতার গল্প দিয়ে শত শত লিসানকে ট্র্যাপে ফেলা হচ্ছে। রূঢ় বাস্তবতা থেকে অনেক লিসানকে কল্পনার জগতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ধরনের প্রচারনায় বিভ্রান্ত হয়ে যে লিসানরা এই পেশায় আসবে তাদের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে প্রথমেই একটা বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি হয়ে পড়বে । এক ধরনের অতৃপ্তি নিয়ে জীবন শুরু করবে। job sarisfaction বলে কিছু থাকবে না। অথচ মেরিন পেশার জন্যে এই ধরনের অতিরঞ্জনের দরকার নেই। অতি রঞ্জন দরকার এই সব মেরিন বেপারিদের বাণিজ্যিক স্বার্থে।

আজ যেখানে মূল মেরিন একাডেমি সহ অনেক ক্যাডেট বেকার হয়ে আছে, এই প্রতিবেদনটি পড়ে তা কখনই মনে হবে না। বণিকের উদ্দেশ্য বাণিজ্য। তার অন্য কিছু দেখার অবকাশ নেই।

বিজ্ঞাপনের আড়ালে অর্ধসত্য বা অসত্য কথা বলে এই চরম ক্ষতিটি করে যাচ্ছে।
এটা শুধু একটি মর্যাদাবান পেশার মর্যাদায় আঘাত হানছে তাই নয়- দেশের মানুষকেও চরমভাবে বিভ্রান্ত করছে। অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। জনস্বার্থেই এ ব্যাপারে প্রকৃত সত্যটি জানিয়ে দেওয়া দরকার।

এই বাণিজ্যিক প্রচারণায় কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যা হয়েছে এর মাধ্যমে মেরিন নামক সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে সত্যি সত্যি জবাই করে ফেলা হচ্ছে। অথচ একটি সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হলে ( সেখানে প্রাইভেট সেক্টরও থাকতে পারে) এই হাঁসটির কাছ থেকে অনেক সোনার ডিম পাওয়া যেতো।

বলতে দ্বিধা নেই, সারা দেশে যে লুটপাট শুরু হয়েছে তা থেকে মেরিন সেক্টরটিও রক্ষা পায় নি। কোনরূপ গবেষণা এবং যথাযথ অনুসন্ধান ব্যতিরেকে গণ হারে প্রাইভেট মেরিটাইম ইনস্টিটিউট খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এই সব বণিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কারিশমার সাথে পাল্লা দিয়ে মূল মেরিন একাডেমির ক্যাডেটরা কিভাবে নিজেদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন তাও বিরাট একটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে । ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে মেধাবী ছেলেদের মেরিনে আসার রাস্তাটি চিরতরে বন্ধ করে ফেলা হয়েছে।

অথচ বিশ্বের শিপিং মার্কেটে আমাদের দেশ আজ যে জায়গা করে নিয়েছে তাতে মূল ভুমিকা রেখেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এই সব মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলেগুলি । এরাই ছিল পুরো কাঠামোটির মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ডটিকে দুর্বল করে বাইরে যতই মাংস পরানো হোক তা কোন দিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
তবে মেরুদন্ডটি ঠিক রেখে বাইরে মাংস পরানো হলে আমার আপত্তি ছিল না।

প্রাইভেটাইজেশন অনেক আগে থেকে শুরু হলেও দেশের মেরিটাইম শিক্ষাটিকে একটা সরকারী প্রটেকশন দেওয়া হতো। স্বাধীনতার পর থেকে গত চল্লিশ বছর সবগুলি সরকার এই প্রটেকশনটি দিয়ে এসেছে ।
কিন্তু বর্তমান সরকার ২/৩ বছর আগে রাতারাতি ১৫/২০ টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাইভেট মেরিন একাডেমি খোলার অনুমতি দিয়ে এই চরম ক্ষতিটি করেছে । এদের দুয়েকজন আদম বেপারির স্টাইলে রীতিমত মেরিন বেপারিগিরি শুরু করে দিযেছে।

তবে বিশ্ব বাজার ও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনেকেই মনে করেন সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে এই অনুমোদনটি দেওয়া যেতো। পরিকল্পিত প্রাইভেটাইজেশন যেমন সৌভাগ্য বয়ে আনে, অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রাইভেটাইজেশন তেমনি ভাবে অতীব কষ্টের কারন হতে পারে।

এই সব ক্যাডেট তৈরির আগে বিশ্ববাজারে তাদের চাহিদা এবং তাতে তাদের কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানে ক্যাডেটের এই সংখ্যাটি নিয়ন্ত্রণ যতটুকু সহজ ছিল , অপরিকল্পিত উপায়ে বেসরকারী পর্যায়ে এই সুযোগটি অবারিত হওয়াতে তা আজ অনিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ।
এই কুপরিকল্পনার ফলে শত শত মেরিন ক্যাডেট বেকার হয়ে আছে। এদের অনেকেই সরকারী ও বেসরকারী মেরিন বেপারিদের প্রতারনার শিকার হয়েছে বলে মনে করছে। মেরিন একাডেমিতেও নাকি ‘ যত ক্যাডেট তত লাভ’ এই তরিকা শুরু হয়ে গেছে।
আমাদের দেশের অনেক মেধাবী যুবক এই পেশায় আগ্রহী ছিল। তাদের সেই আগ্রহে এখন ভাটা পড়ছে। ফলে মেরিটাইম নেশন হিসাবে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাটি ধুলিস্যাত হয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব বাজারে চাহিদা থাকুক আর না থাকুক, সেখানে পাঠানোর সুযোগ থাকুক আর না থাকুক – এই সব প্রতিষ্ঠান চলতেই থাকবে। এক লিসানকে নিয়ে এই সব ‘ভেলকি ‘ দেখাবে এবং হাজার হাজার লিসান এই ভেলকি দেখবে।

আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবো।

Comments are closed.