search the site
সাত মহাদেশ, পাঁচ মহাসাগর পেরিয়ে

‘আমার মতে, গোটা পৃথিবীই একটা দেশ। এখানে কোনো সীমানা থাকা উচিত নয়। সৃষ্টির শুরুতে কোনো দেশের আলাদা পরিচয় ছিল না। মানুষ ধীরে ধীরে পৃথিবীকে ভাগ করেছে, মানুষকে ভাগ করছে। আমি পৃথিবী, মানুষকে ভাগ করতে চাই না। কারণ আমরা একই ভূমণ্ডলে বাস করছি, সেখানে আবার কীসের ভাগাভাগি?’
কথাগুলো বলছিলেন সাত মহাদেশ ও পাঁচ মহাসমুদ্র ঘুরে আসা পর্যটক রাজশাহীর তানভীর অপু। গতকাল রোববার চৈত্রের বিকেলে শহরের পদ্মা নদীর পারে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আলাপের ফাঁকে জানালেন ১৯ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের দারুণ সব অভিজ্ঞতা।
সর্বশেষ কোটি বছর আগের বরফ জমাট অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ঘুরে এসেছেন তানভীর অপু। অ্যান্টার্কটিকার পথে কুখ্যাত ড্রেক প্যাসেজে তিন মহাসমুদ্রের মিলনস্থলে ঢেউয়ের পাকে পড়ে তিনি জীবনকে যেমন মহামূল্যবান ভেবেছেন, তেমনি শত শত বিশালাকার তিমি মাছ, এক ফ্রেমে লাখ লাখ পেঙ্গুইন আর সিল (অর্ধ-জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী) দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও পেয়েছেন।
অপু জানান, ২০০৫ সালে ফিনল্যান্ডের ভিসা আনতে ভারতের দিল্লিতে যান তিনি। সেখানে কুতুব মিনার, সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি, লালকেল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। এর পর ভিসা পেয়ে উড়ে যান ফিনল্যান্ডে। সেখানে পড়াশোনার ফাঁকে জাহাজে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে ঘুরতেন। সেখানেই তাঁর ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে। এর পর একে একে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৯২টি দেশের ৯৩৭টি শহর ঘুরেছেন অপু। উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা।
অপুর ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল অ্যান্টার্কটিকায়। গত ৬ ডিসেম্বর ৩০ বাঙালিসহ ১৩০ জন অ্যান্টার্কটিকার পথে বেরিয়ে পড়েন। তবে মাঝপথে ফিরে আসেন দু’জন। অপু বলেন, ২১ দিনের অ্যান্টার্কটিকার দুর্গম পথে ভ্রমণ ছিল ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। বিশ্বের দক্ষিণতম শহর আর্জেন্টিনার উশুইয়া থেকে তাদের জাহাজ ছেড়ে যায় দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্যাটাগনিয়ান শেলফে অবস্থিত দ্বীপপুঞ্জ ফকল্যান্ডের রাজধানী সেন্টলিতে। ১০ তলা জাহাজের ছাদে মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছিল। সে যাত্রায় ১০ বছরের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান এক শিশু ও ৮০ বছরের দুই বাংলাদেশি ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অপুর ভাই আরেক পর্যটক তারেক অণু।
সেই যাত্রার বর্ণনায় অপু বলেন, আমাদের জাহাজ ফকল্যান্ড থেকে এগিয়ে যেতে থাকে সাউথ জর্জিয়ার পথে। সেখানকার আইসল্যান্ডে একসঙ্গে ৩ লাখ পেঙ্গুইন দেখে আমি বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়ি। পুরো অ্যান্টার্কটিকায় আমরা আট প্রজাতির পেঙ্গুইনের দেখা পেয়েছি। পেঙ্গুইন ছাড়াও ছিল হাজার হাজার সিল। ছোট বোটে চড়ে কোটি বছর আগের পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা বরফগুলো দেখলাম গলে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর অনেক জায়গা ডুবে যাওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, এটারই যেন প্রমাণ দেখছিলাম। পেনিনসুলাতে একসঙ্গে শতাধিক হাম্পব্যাক তিমি দেখেছি। ৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের হিমশৈল ‘এ২৩এ’ দেখারও সৌভাগ্য হয়েছে।
এর আগে বিখ্যাত শহর রোম, আশ্চর্য শহর ভেনিস, রোমান্টিক শহর প্যারিস ঘুরেছেন অপু। পৃথিবীর উত্তরের শেষ শহর হ্যামারফেস্ট, উত্তরের শেষ প্রান্ত নর্থক্যাপেও তিনি পা দিয়েছেন। ২০১৬ সালে গ্রেড ওশান রোড হয়ে সিডনি থেকে মেলবোর্ন যান তানভীর অপু। সেখানে ক্যাঙ্গারু, কাকাতুয়া, কুকাবুরা, প্লাটিপাসসহ পৃথিবীর বিরলতম প্রাণীর দেখা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল ভ্রমণ করেন তিনি। মিসর ঘোরার অভিজ্ঞতা বর্ণনায় অপু বলেন, পিরামিড আর হাজার হাজার বছর আগের মমি যেন ইতিহাসের মাতাল দুনিয়ায় নিয়ে যায়।
source : samakal